পলাশবাড়ীতে একই পরিবারের দুই প্রতিবন্ধী ছেলের ভোগান্তি

প্রকাশঃ ২০২১-০৩-২৬ - ২০:৫০

আশরাফুল ইসলাম, গাইবান্ধা : আজ বাংলার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার নুর আলম শেখ (৪৫) ও শেফালি বেগম (৩০) দম্পতির সংসারে দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন। বড় ছেলে শিপন (১৫) জন্মের পর থেকেই ধিরে ধিরে হাত পা চিকন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তাঁর হাটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করে স্মার্ট মোবাইল না থাকায় অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি। ফলে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত একই স্থানে বসে থাকতে হয় তাকে। বসে থাকতেও নিদারুন অমানবিক কষ্ট। মুহুর্ত মুহুর্তেই শুধু কষ্ট আর কষ্ট। যেন এ কষ্টের নিস্তার নেই কষ্ট আদৌ লাঘব হবে কি-না? বিগত জন্মের পর থেকেই তার এমন অমানবিক জীবন যাপন। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তার ভীষন কষ্ট। এসময় পড়নের কাপড়েই প্রকৃতির কাজ সাড়তে হয়। অপরের সাহায্য ছাড়া তাঁর জীবন যাত্রা যেন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হুইল চেয়ার।

নুর আলম শেখের বাড়ি পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ী গ্রামের কানিপাড়ায়। পেশায় একজন দিন মজুর। নি:স্ব পরিবারটি সরকারের হতদরিদ্রদের তালিকায় নাম না থাকায় ১০ টাকা দরে চালও পায় না। নেই প্রতিবন্ধী দুই ছেলের একটি হুইল চেয়ার। তাদের জন্য ২ টি হুইল চেয়ার ও একটু আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার আজকের এই দিনে তাৎপর্য তুলে ধরে কতজন না কত রকম বক্তব্যের ফুলঝুড়িতে মাইক ফাটানোর উপক্রম করবেন কত টাকা পয়সা ব্যয় করবেন তার কোন নির্ধারণ নেই। তাই আজকের এই ব্যয়ের মাঝে অসহায় পরিবারটির সহায়তার ব্যয় বহন করার জন্য সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণসহ গণম্যান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সরেজমিনে গিয়ে নুর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শারিরীক প্রতিবন্ধী দুই ছেলে ঝুবড়ি ঘরে বসে আছে মাটিতে। ছোট ছেলে রিপন ও বড় ছেলে শিপন। অসহায় পিতা নুর আলম শেখ জানান, দুই ছেলেকে সাধ্যমতে চিকিৎসা করেছি। বড় ছেলে শিপন শেখ সপ্তম শ্রেনিতে পড়ে। আগে একটি হুইল চেয়ার ছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে কোলে করে নিয়ে শুধু বিদ্যালয়ে নয় সব জায়গাতে নিয়ে যেতে হয়। তিনি আরো জানান, তাদের সংসার চলে অভাব-অনটনে। অনেক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সংসারের ঘানি টানছেন তিনি। দুই ছেলেকে হুইল চেয়ার কিনে দেয়ার সার্মথ নেই। তাই দুইটি হুইল চেয়ার পেলে কিছুটা স্বাভাবিক চলাচল করতে পারবে তার দুই সন্তান।

প্রতিবন্ধী শিপন শেখ অঝরে ছোখের পানি ছেড়ে বলেন, ছোট থেকে হাটতে পারি না। দাঁড়াতে গেলে মেরুদ- সোঁজা হয় না। পা দুটি চেকন (সরু) হয়ে গেছে। এক সময় হুইল চেয়ার করে স্কুলে যেতাম, সপ্তম শ্রেনি পযর্ন্ত পড়েছি। তারপর হুইল চেয়ারটির চাকা নষ্ট হয়ে গেল পাশাপাশি করোনা ভাইরাসে স্কুল বন্ধ হল। দু:খ করে বলেন, যদি শাবিরীক অবস্থা ভাবে ভালো হতাম, তবে বাবার সাথে সংসারের কাজ করতাম। এখন সংসারে এক প্রকার বোঝা হয়ে আছি। আমি হাটতে পারি না, ছোট ভাইটিও প্রতিবন্ধী। কেউ যদি আমাদের দুইটি হুইল চেয়ার দিত। তবে স্বাভাবিক ভাবে একা একা চলাচল করতে পারতাম। পাশাপাশি স্মার্ট মোবাইল থাকলে অনলাইনে ক্লাশ করতাম। এসএসসি পর্যান্ত লেখাপড়ার করার ইচ্ছা থাকলেও অর্থাভাবে তা স্বপ্নের মত লাগে আমার। সরকার এতো প্রতিবন্ধিদের সহায়তা করে আমরা কি তাদের বাহিরে।

প্রতিবেশী এন্তাস মিয়া বলেন, নুর আলম দিনমজুরী কাজ করে,হুইল চেয়ার কিনে দিবে কি দিয়ে। কেউ যদি তাদের হুইল চেয়ার কিনে দিত। খুবই ভাল হত। তাদের ২ টা হুইল চেয়ার আগে দরকার। যাতে একটু স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে।

এবিষয়ে মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, হুইল চেয়ার দেয়ার আমাদের কোন সুযোগ নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলে, আমি সুপারিশ করে দেব। ১০ টাকা চালের বিষয়ে জানতে চাইলে,তিনি জানান, হতদরিদ্রের তালিকা অনেক আগে হয়েছে। নতুন তালিকা করা হলে,তাদের নাম অন্তর্ভূত করা হবে।

উল্লেখ্য, যারা নিজেরাই চলতে ফিরতে পারে না । যাদের পরিবারে অভিভাবক খাবার জোগাড় করতে দিন রাত একাকার হয়ে যায়। তারাই এই অসহায় পরিবারটি এই শিশুদের নিয়ে কি ভাবে অন্যের দাড়ে দাড়ে ঘুরবে। অসহায় পরিবারটির ২ বিশেষ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ দুটির সহায়তায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন ।