পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দেশকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারে : ডিসি রাশিদা বেগম

প্রকাশঃ ২০২৩-০১-৩০ - ১৩:০৪

মো.আরিফুর রহমান : “সৃষ্টির যা কল্যাণকর অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।” পুরুষের সাথে যখন কোন কাজে নারীর হাতের ছোয়া লাগে তখন সেটি হয় দৃষ্টি নন্দন। আবার ওই নারীর অনুশাসন এবং মায়ের মমতা দিয়েও সুন্দর সমাজ রাষ্ট্র গঠণ করা যায়। যেমনটি দেখিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রাশিদা বেগম। যেখানে নারীরা শুধুই ঘর ও সন্তানকে মানুষ করতো আজ সেখানে নারীর সেই হাত দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র শাসন করছেন। সন্তান সংসার সামলানোর পাশাপাশি যিনি ঘরও সামলাচ্ছেন সমাজও পরিচ্ছন করছেন। ব্যতিক্রমধর্মী এই পুলিশ অফিসার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী। শিক্ষা জীবন থেকেই যিনি মানুষের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাতদিন পড়াশোনা করে বিসিএস পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। চলে আসেন পুলিশ প্রশাসনে। পেছনে আর থেমে থাকেননি তিনি। অবিরাম গতিতে চলছেন সমাজ সংস্কার করে। কাজ করছেন জনগণ ও দেশের কল্যাণে । ’পুলিশ জনগণের বন্ধু’ তিনি এই বাক্যটির উৎকৃষ্টতা প্রমাণ করেছেন। অর্জন করেছেন ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক’ (পিপিএম)। বর্তমানে রাশিদা বেগম এসপি পদমর্যাদায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হিসেবে সিটি এসবি ইউনিটের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালে তিনি পিপিএম পদক লাভ করেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীর দু’টি হাত দেশ ও জাতিকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারে।
দৈনিক দেশ সংযোগ’এ দেয়া সাক্ষাৎকারে ছোটবেলায় ফেলে আসা দিনগুলোর কিছুটা স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, রাশিদা বেগমের জন্মস্থান কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায়। পিতা সরকারী চাকুরী করার সুবাদে শৈশব কেটেছে শরীয়তপুর ডামুড্যা উপজেলায়। ১৯৮৮ সালে ডামুড্যা গার্লস হাই স্কুল থেকে তিনি ৮ম শ্রেনিতে বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এসময়ে বয়েজ স্কুল এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তাকে শুভেচ্ছা উপহার দেন। যা তাকে আরো অনুপ্রাণিত করেছে বলে তিনি জানান। ফলে ১৯৯০ সালে একই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। তার শৈশব কেটেছে ডামুড্যায়। ১৯৯২ সালে তিনি ঢাকার বেগম বদরুজন্নেসা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ২০০১ সালে তিনি বিসিএসের ২২তম ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে কৃতিত্বেও সাথে উর্ত্তীণ হন। ২০০৩ সালে চাকুরীতে যোগদান করেন। তার প্রথম কর্মস্থল খুলনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। সেখানে তিনি এএসপি পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বলে তিনি জানান।
চাকুরীজীবন নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, একটি ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তে বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন আমি সোনাডাঙ্গা থানায় সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছি। এমন এক সময় একজন নারী গণধর্ষনের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন। এরপর নারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে মেডিকেলের ওসিসি এবং ঘটনা স্থল পর্যবেক্ষন করা হয়। ঘটনাটি তদন্তে দেখা যায়, ভিক্টিম ও তার পরিবারের কথায় বিশদ তারতম্য রয়েছে। তখন দু’পক্ষের কথায় গণধর্ষনের ঘটনাটি সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখন বিষয়টি পুলিশের সন্দেহের চোখে দেখে গণধর্ষনকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মামলা করতে আসা নারী স্বীকার করেন যে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তিনি এ ঘটনা সাজানো হয়েছে। মামলা রুজু হওয়ার পূর্বেই ঘটনার পিছনের ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসে এবং মামলা রুজুর পূর্বেই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়। এটা আমার কর্মজীবনে একটি স্মরনীয় ঘটনা হিসেবে হৃদয়ের স্মৃতিতে রয়ে গেছে।
২০১৬ সালে নগর বিশেষ গোয়েন্দা শাখায় যোগদান করেন তিনি। বিভিন্ন অপরাধ মূলক বিষয় অনুসন্ধান ও সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কিশোর গ্যাং-এর বিষয়টি উল্লেখ করে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি পরিবারের সন্তানরা কখন কোথায় যাচ্ছে? কাদের সাথে মিশছে? কখন ঘরে ফিরছে? এসব বিষয়ে সকল পিতা-মাতাকে নজরদারী রাখতে হবে। লেখাপড়াতে ফাঁকি দিয়ে আড্ডায় সময় নষ্ট করছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে হবে। যাতে করে কিশোর ও যুবসমাজ ধ্বংসের পথে পা বাড়াতে না পারে। খুলনাতে অপরাধজনক কর্মকান্ডে যুব সমাজ না জড়িয়ে পড়ে এ জন্য বর্তমানে তিনি বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করছেন।
উল্লেখ্য, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের কার্যক্রমে গতিশীলতা, দক্ষতা বৃদ্ধি,গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন বা অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বে থেকে দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য ২০২০ সালে ৫০ জনকে পিপিএম পদক দেওয়া হয়। পদকপ্রাপ্ত পাঁচজন নারী পুলিশ সদস্যের মধ্যে রাশিদা বেগম একজন।