বটিয়াঘাটার পুলিশ কর্মকর্তা শিশুপুত্র হত্যায় আদালতে মা তনুশ্রীর স্বীকারোক্তি

প্রকাশঃ ২০২০-১২-০৯ - ২০:৩১

ইন্দ্রিজৎ টিকাদার, বটিয়াঘাটা : বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা গ্রামের পুলিশ কর্মকর্তার শিশুপুত্র অনুভব মন্ডল যশ (০৪)হত্যার দ্বায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে ভিকটিমের মা তনুশ্রী মন্ডল ।  গত মঙ্গলবার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট -২ এর বিজ্ঞ বিচারক নয়ন বিশ্বাসের সামনে তিনি এ স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) উজ্জল কুমার দত্ত জানান, উপজেলার ফুলতলা গ্রামের নিমাই মন্ডলের ছোটপুত্র অমিত মন্ডল ডিএমপির বাড্ডা থানায় উপ-সহকারী পুলিশ পরিদর্শক পদে কর্মরত থেকে স্ত্রী তনুশ্রী মন্ডল ও একমাত্র শিশু পুত্র অনুভব মন্ডলকে সাথে নিয়ে কর্তব্যরত ছিলো । গত ২৯ নভেম্বর রবিবার অমিতের স্ত্রী। তনুশ্রী মন্ডল তার শিশুপুত্র যশকে নিয়ে ঢাকা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে স্বামীর গ্রামের বাড়ী ফুলতলা এলাকায় রাসস্নান উপলক্ষ্যে বেড়াতে আসে।ওই দিন রাতে তনুশ্রী মন্ডল যশকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে দ্বিতল ভবনের নিজস্ব শয়নকক্ষের রুমে দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে।রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে তনুশ্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে রুমে ঢুকে তার শিশুপুত্র যশকে পাটের রশ্মি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে নিজেই চারটি ঘুমের বড়ি সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।পরদিন ৩০ নভেম্বর সোমবার তনুশ্রী মন্ডল ও তার শিশুপুত্র যশের হালিয়া মামার বাড়ীতে সকালে গিয়ে পিঠা খাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যেতে দেরী হওয়ায় তনুশ্রীর মা জোনাকি মহালদার মোবাইল ফোনে মেয়ের সাথে যোগাযোগ করলে মেয়ের অস্বাভাবিক আচারণ পরিলক্ষিত হওয়ায় জোনাকি মহালদার হালিয়া থেকে ফুলতলা জামাই বাড়িতে ছুঁটে আসেন। এসে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই মেয়ে ও নাতি যশকে অচেতন অবস্হায় দেখতে পায়।এ সময় তিনি যশকে কোলে তুলে নিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগার চিহ্ন দেখে আত্মচিৎকার দিলে ঘর ও আশপাশের লোকজন ছুঁটে এসে যশকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে এবং গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন দেখে হাসপাতাল কত্রৃপক্ষ থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যশের জ্যাঠা অনুপ মন্ডলকে গ্রেফতার ও মা তনুশ্রী মন্ডলকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে। ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভিকটিমের পিতা অমিত মন্ডল বড় ভাই অনুপ মন্ডলকে এজাহারভূক্ত আসামি করে তার সন্তানের কাছাকাছি ছিলো এমন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে ১ নং হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে এজাহারভূক্ত আসামী অনুপকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ প্রদান করেন। রিমান্ড শেষে গত রবিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায় এবং ওইদিন ভিকটিমের মা তনুশ্রীকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৬ ডিসেম্বর ৪ দিনের রিমান্ড মন্জুর করেন। পুলিশ জানায়,উপজেলার ফুলতলা গ্রামের নিমাই মন্ডলের পুত্র ডিএমপির উপ – সহকারী পুলিশ পরিদর্শক অমিত কুমার মন্ডল তার স্ত্রী তনুশ্রী মন্ডল সহ শিশুপুত্র অনুভব মন্ডল যশ (০৪) কে নিয়ে রাজধানী ঢাকায় বসবাস থেকে কর্তব্যরত ছিলো। গত ২৯ নভেম্বর রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে স্ত্রী তনুশ্রী মন্ডল শিশুপুত্র যশ কে নিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে ফুলতলা নামক গ্রামে স্বামীর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রাতের আহার শেষে পুত্র যশকে নিয়ে দ্বিতল ভবনের নিচতলায় শয়নকক্ষের দরজা বন্ধ করে তনুশ্রী মন্ডল ঘুমিয়ে পড়ে। পরেরদিন ৩০ নভেম্বর সোমবার সকাল ১০ টার দিকে তনুশ্রীর মা জোনাকি মহালদার মেয়ে তনুশ্রী মন্ডলের মোবাইল ফোনে কল দেয়। মোবাইলে মেয়ের কথার সাথে অসংলগ্ন মনে হওয়ায় জোনাকি মহালদার তাৎক্ষণিকভাবে ফুলতলা জামাইয়ের নিজ বাড়ীর শয়নকক্ষের রুমে ঢুকে নাতি যশকে কোলে তুলে গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন ও অচেতন অবস্হায় দেখতে পেয়ে ডাকচিৎকার দেয়। আত্মচিৎকারে বকড়ীর লোকজন ও স্হানীয় প্রতিবেশি ছঁুটে এসে যশকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। স্হানীয়দের অভিযোহের প্রেক্ষিতে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জ্যাঠা অনুপকে গ্রেফতার ও ভিকটিমের মাকে হেফাজতে নিয়ে আসে পুলিশটজ হেফাজতে নিয়ে আ সপ্তাহের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত যশের জ্যাঠা অনুপকে ৫ দিনের রিমান্ড মন্জুর করে। এ ব্যাপারে যশের পিতা ১ ডিসেম্বর বুধবার বড়ভাই অনুপ মন্ডলকে এজাহারভূক্ত আসামী করে যশের কাছাকাছি এরো এমন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামাউল্লেখ করে ১নং হত্যা মামলা দায়ের কররে পুলিশ ওই দিন থেকেই হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমে পড়ে। তদন্তকালে বিভিন্ন আলামত ও সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে মা তনুশ্রী মন্ডলের আচরনে সন্দেহ ও রহস্যজনক মনে হওয়ায় রাত সোয়া দশটার দিকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার সকালে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। গত ৬ ডিসেম্বর রবিবার আসামি অনুপ মন্ডলের ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ পূর্বক সন্ধিগ্ধ আসামী তনুশ্রী মন্ডলকে এক সপ্তাহের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাকে ৪ দিনের রিমান্ড মন্জুর করেন। পরদিন ৭ ডিসেম্বর সোমবার তনুশীকে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর শিশুপুত্র যশ হত্যা মামলায় মা তনুশ্রীর নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলে পরদিন ৮ ডিসেম্বর মঙ্গররবার বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট-২এর বিচারক নয়ন বিশ্বাসের আদালতে নিজের দ্বায় স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।পুলিশ আরও জানায়, স্ত্রী তনুশ্রী মন্ডলের সাথে স্বামী এএসআই অমিত মন্ডলের সাংসারিক জীবনে তেমন বনিবনা ছিলো না। স্ত্রী তনুশ্রী মন্ডলকে বিভিন্ন বিষয়ে তার স্বামী অসিত মন্ডল মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো।তারই ফলশ্রুতিতে তনুশ্রী নিজের সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে বাধ্য হয়েছিলো।