বটিয়াঘাটায় কলকারখানা ও আবাসিক স্থাপনায় কমছে কৃষি জমি

প্রকাশঃ ২০২১-০৪-২৮ - ১৫:০৪

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি : বটিয়াঘাটা উপজেলায় আবাদী জমিতে বড় বড় কলকারখানা ও আবাসিক স্থাপনা গড়ে ওঠায় আবাদী জমিতে স্হাপনা আইন উপেক্ষিত হয়েই চলেছে। ফলে দিনে দিনে স্হানীয় ভাবে যেমন কৃষি আবাদ কমে যাচ্ছে অন্যদিকে তেমনি ফসলি খাদ্য ঘাটতির সমূহ সম্ভাবনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।জানা গেছে, মহানগরী খুলনার প্রবেশদ্বার নদীবেষ্টিত কৃষি প্রধান জীবন- জীবিকা নির্ভরর্শীল বটিয়াঘাটা এ উপজেলায় আবাদী জমিতে স্থাপনা নির্মাণ আইন চরমভাবে লঘ্নিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশী লঙ্ঘিত হচ্ছে উপজেলার জলমা ইউনিয়নের মহম্মদনগর, জিরোপয়েন্ট,লবনচরা,সাচিবুনিয়া , নিজখামার,হরিনটানা,মাথাভাঙ্গা,পুঁটিমারী,কৈয়াবাজার,ঘোলা, রাঁজবাঁধ- হোগলাডাঙ্গা এলাকায়। শুধু তাই নয়, উপজেলার গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের বরনপাড়া,কাতিয়ানাংলা,দেবীতলা ও ফুলতলা এলাকা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্হানে।তৃতীয় অবস্হানে রয়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাটবাটী,হোগলবুনিয়া,হেতালবুনিয়া,কিসমত ফুলতলা,শোলমারী, বাদামতলা,মাইলমারা এলাকা।অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ পন্হায় বালু ভরাট করে বাড়ি ঘর ও শিল্পকারখানা গড়ে তোলায় আবাদী জমির পরিমাণ দিনের পর দিন কমেই চলেছে আশংকাজনক ভাবে। আবাদী জমি নষ্ট করে কোন শিল্প কারখানা ও ইমারত তৈরী করা যাবে না সরকারের এমনি নির্দেশনা থাকলেও তোয়াক্কা করছে না কেউ।শুধু তাই নয়,সরকারী ও সৈয়দপুর ট্রাষ্টের খাস খাল এখন ওই সকল অবৈধ প্লট ব্যবসায়ী এবং দখলদারদের দখলে। বিগত পাঁচ বছর ধরে এ সব স্থানে প্লটিং করে জমি বিক্রি করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় কতিপয় অসাধু ব্যক্তি কেডিএ এর পূর্বানুমতি ছাড়াই সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কৃষি জমিকে অকৃষি দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই ওই একই সাথে তাঁরা সরকারী সকল খাঁস খালে বালু ভরাট করে কৃত্রিম পথ বানিয়েও তারা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে। অবৈধ ওই সকল প্লট ব্যবসায়ীদের নেই কোন কেডিএ, সিটি কর্পোরেশন কিংবা উপজেলা পরিষদ ও স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদের প্লট ব্যাবসার অনুমতি।নেই কোন ইনকাম ট্যাক্সের সনদ ও ট্রেড সনদ। একটি সূত্র জানায়, মহানগরীতে জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ও জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ওই সকল ভূমি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে বাড়িঘর ও শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়ায় শহর সংলগ্ন কৃষি প্রধান এ উপজেলার দিকে ঝুঁকে পড়ছে । দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে যদি সরকারী নীতিমালা বাস্তবায়িত না হয় তাহলে অচিরেই যে এ উপজেলার আবাদী জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে কৃষি জমি থেকে অকৃষি জমিতে পরিবর্তন হয়ে এলাকায় চরম খাদ্য সংম্কটে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে উপজেলায় আবাদী জমির পরিমান ছিল ১৯ হাজার ৯২৫ হেক্টর। বর্তমানে ২০২০ সালে ২০৪ হেক্টর কমে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে। পরিসংখ্যান জরিপে দেখা যায়, এভাবে যদি থাকে আগামী কয়েক বছরে যে এ উপজেলা থেকে কৃষি জমি একেবারেই বিলীন হয়ে যাবে তা কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। অসাধু সুযোগ সন্ধানী ওই সকল ব্যক্তিদের সরকারী নিয়মনীতি ও আইনের প্রতি দিনের পর দিন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং সরকারী খাস খাল ও জলাশয় বালুভরাট করে পথ নির্মান করে কৃষি জমি কেঁনা- বেঁচা করায় কালে কালে পয়ঃনিস্কাশন ও সেচ পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।ফলে কৃষক তাঁর মেহনত জমির উপর প্রয়োগের পরেও কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলে আনতে না পারায় বাধ্য হয়েই অসাধু ওই সকল জমির দালালদের ডাকে অধিক দামে জমি ক্রয়- বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে।অন্যদিকে আবাদী জমি সলকুচিত হওয়ার অন্যতম কারন হলো রেললাইন নির্মান,আবাসস্থল নির্মান ও কলকারখানা স্থাপন। অথচ আবাদী জমিতে অবৈধ ভবন ,কল-কারখানা যাতে গড়ে না ওঠে তা দেখার জন্য একটি কমিটিও রয়েছে কিন্তু সারা দেশের ন্যায় এ উপজেলাতেও।সরকারী নির্দেশনার প্রতি কমিটির নিষ্ক্রিয়তার কারন ও কোন নজর না দেওয়ার কারনেই হাজার হাজার পাকাভবন ,শিল্প কল কারখানা স্থাপিত হচ্ছে।
শুধু জলমা ইউনিয়ন নয়,খুলনা- চালনা সড়কের পাশ দিয়ে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে অনেকের কৃষি জমিকে অকৃষি দেখিয়ে সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও কারো করো আবার কোন প্রকার কোন অনুমতি নেই বললেই চলে।এখানেই শেষ নয়,আমিরপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর,বাইনতলা, নারায়নপুর,খাঁরাবাদ বইনতলা, কড়িয়া ,ভান্ডারকোর্ট ইউনিয়নের কুঁটির হাট,সাঁদালবাজার এলাকায়ও আবাদী জমি ভরাট করে প্লটিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। আবাদী জমি দখল করে ইমারত ও শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় আবাদী জমি নষ্ট হয়ে ফসল হানির ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভুমি) মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দীকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান , আবাদী জমি দখল করে কোন কিছু নির্মান করা যাবে না বলে সরকারী আইন রয়েছে। কিন্তু পরিলক্ষিত হচ্ছে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় কাজটি করছেন।আইন চির বিদ্যমান। ছিলো আছে এবং থাকবে। যিঁনি কিংবা যে এ ডাকে সাঁড়া দিচ্ছেন আজ হোক আর কাল হোক ধরা খেতেই হবে। সুতরাং জেনে শুনে, সরকারী নীতিমালা জেনেই জমি ক্রয়- বিক্রয় করা উচিৎ।বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিক ভূক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে ব্যক্তিগতভাবে অবগত হয়েছি, আসলেই ঘটনাটি এলাকাভিত্তিক উদ্বেগজনক। আমি আইনগতভাবে বিষয়টি দেখবো।