বনদস্যু মুক্ত হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন অধিবাসীরা ভোট দস্যুদের হুমকিতে

প্রকাশঃ ২০১৮-১২-২৭ - ১৮:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক : গেল সেপ্টেম্বরে র‌্যাবের তৎপরতায় উপকূলীয় এলাকা বনদুস্যমুক্ত হলেও ভোট দস্যুদের হুমকিতে আতংকগ্রস্থ সুন্দরবন সংলগ্ন অধিবাসীরা। সরকারী দলের সমর্থকদের হুমকিতে সপ্তাহ খানেক আগ থেকে বাড়ি ছাড়া হয়েছে বিরোধীদল সমর্থক ভোটাররা। সেনাবাহিনী টহল দিলেও নিরাপত্তা পাচ্ছেনা বিরোধী দলের সমর্থকরা। পাশাপাশি ২৩টি মামলা কাধেঁ নিয়ে আড়াই মাস কারাবন্দী হয়ে আছেন ২০দলীয় জোটের প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এ চিত্র সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও পাইকগাছা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনের। উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত মাওলানা আ.খ.ম. তমিজ উদ্দিন কয়রার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ আসনের অপর উপজেলা পাইকগাছার নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত স.ম. বাবর আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভোট ডাকাতদের কারণে এ দু’ উপজেলার মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত এ এলাকায় নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর বাতাস বিরোধী দলের অনুকূলে বয়। সে অবস্থা পাল্টে গেছে এক সপ্তাহ আগ থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সমর্থক জানান, গত পাঁচ বছর ধরে তারা হামলা-মামলায় জর্জরিত। চিংড়ি ঘের দখল হয়েছে একাধিক। গায়েবী মামলায় এখনও ৪৫জন কারাগারে বন্দী। সেই সাথে বন্দী রয়েছেন ২০ দলের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, সরকারি দলের সমর্থকরা বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। সরকারি দলের সমর্থকরা বলেছে, উপস্থিত হলে ভোটের পরে পেন্ডিং মামলায় ঢুকানো হবে। অপর একজন জানান, সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগর ও বন এলাকা বনদস্যু মুক্ত হলেও সুন্দরবন সংলগ্ন অধিবাসীরা ভোট দস্যুদের হুমকিতে আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বিগত দিনের রেকর্ড অনুযায়ী, এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত স.ম. বাবর আলী ৬৫ হাজার ৬০৮ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ মনোনীত শেখ রাজ্জাক আলীর প্রাপ্ত ভোট ১৭ হাজার ৫৮। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত শেখ রাজ্জাক আলী ৩৪ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স.ম. বাবর আলীর প্রাপ্ত ভোট ২৮ হাজার ৬১৭। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মরহুম মোমিন উদ্দিন আহমেদ ৩০ হাজার ৬৯৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সোহরাব আলী সানার প্রাপ্ত ভোট ৩০ হাজার ১৮৭। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত সরদার জহুরুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত শাহ মুঃ রুহুল কুদ্দুস ৫৮ হাজার ৩৬৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হকের প্রাপ্ত ভোট ৫৭ হাজার ৬৬৯। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হক ৬৬ হাজার ৩৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের ইসলামীর শাহ মুঃ রুহুল কুদ্দুসের প্রাপ্ত ভোট ৪৯ হাজার ২৩। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত শাহ মুঃ রুহুল কুদ্দুস ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হকের প্রাপ্ত ভোট ৮৯ হাজার ৩১২। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সোহরাব আলী সানা ১ লাখ ৩১ হাজার ১২১ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের ইসলামীর শাহ মুঃ রুহুল কুদ্দুসের প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ১৬ হাজার ১৬১। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মো. নূরুল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন। এ আসনে এবারের প্রার্থীরা হচ্ছেন- ২০ দলীয় জোট মনোনীত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ মনোনীত আক্তারুজ্জামান বাবু, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত মাওলানা গাজী নূর আহমদ, জাতীয় পার্টি মনোনীত শফিকুল ইসলাম মধু, জাকের পার্টি মনোনীত শেখ মর্তুজা আল মামুন, বাম গণতান্ত্রিক জোট মনোনীত সুভাষ চন্দ্র সানা ও ন্যাশলিস্ট ফ্রন্টের মীর্জা গোলাম আজম। এ আসনে ভোটার সংখ্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৪। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৯ এবং মহিলা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৫। ১৪১টি কেন্দ্রের ৭৭৬টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সূত্র বলেছেন, জাতীয় পার্টির মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি অংশ দলীয় প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত আক্তারুজ্জামান বাবু নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন পথ সভায় বক্তৃতাকালে বলেন, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলাকে মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আতংকগ্রস্থ এলাকাবাসীর নিরাপদ অবস্থানের জন্য চেকসই বাঁধ দেওয়অ হবে। মাদক নির্মূল করতে তিনি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবেন। খুলনা-৬ আসনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী’র চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি বক্তৃতাদানকালে বলেন, তিনি এ দু’ উপজেলার উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিলেন। তিনি বলেছেন, এ অঞ্চলে বেকার এবং দারিদ্রতা থাকবে না। কারাবন্ধী সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদের আইনজীবী জানান, প্রার্থী তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নির্বাচনের সময় কয়রা ও পাইকগাছা এলাকার ভোটারদের কাছে যেয়ে তিনি আবেদন জানাতে পারেন নি। কারাবন্দী প্রার্থীর উদ্ধৃতি দিয়ে আইনজীবী জানান, স্বৈর শাসনের অবসানের জন্য গণতন্ত্র প্রত্যাশি মানুষকে ধানের শীষ প্রতিকে ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। আপামর জনগনের প্রতি তার আবেদন, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে মানুষ ধানের শীষ প্রতিককেই বেছে নিয়েছে। দৃঢ়তার সাথে আইনজীবী আরও বলেন, মুক্ত আবুল কালাম আজাদের চেয়ে বন্দী আবুল কালাম আজাদ অনেক শক্তিশালী।