বাগেরহাটে চলছে সরকারী রাস্তার তালগাছ কাটার মহোৎসব

প্রকাশঃ ২০১৯-০৭-২০ - ১১:১২

বাগেরহাট: বাগেরহাটের কচুয়ায় চলছে অবৈধভাবে সরকারী রাস্তার পাশের তালগাছ কাটার মহোৎসব। এলাকাবাসি ও স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাধা দিলে ও তা মানতে নারাজ গাছ খেকো এ চক্রটি। বুধবার সকাল থেকে কচুয়া উপজেলার শিবপুর বিষখালী রাস্তার মধ্য গোপালপুর সড়কের পাশের তালগাছ গুলি কাটা শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার এলাকাবাসি ও স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাধা দিলে সামাজিক বনবিভাগের একটি কার্যাদেশ দেখায় এই চক্রটি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী সহ পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এসময়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম. মাহফুজুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা বৈধভাবে কিনেছেন বলে দাবী করেন এবং এলাকাবাসিকে গাছ কর্তনে বাধা দিতে নিষেধ করেন। ওই সময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিকদার আবু বক্কর সিদ্দিকের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাক বিতন্ডা সৃষ্টি হয়। কোন বাধা না মেনেই তারা তালগাছ কর্তন অব্যাহত রাখে।
শুক্রবার সকালে পুনরায় তালগাছ কর্তন শুরু হলে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানায়। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌছে গাছ ক্রেতা পরিচয়ে উপজেলার দোবাড়িয়া গ্রামের তৈয়ব সরদারের ছেলে অহিদ সরদার বলেন, তিনি ৫০টি তালগাছ কিনেছেন, এরমধ্যে ১২টি গাছ কেটেছেন, বাকি তালগাছ গুলি কাটার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এসময়ে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা সামাজিক বনবিভাগ বাগেরহাট মো.সাইদুল ইসলামের স্বাক্ষর করা দুইটি কার্যাদেশ দেখান। তাতে তালগাছ কর্তনের বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। গোপালপুর গ্রামের শওকত হোসেন, চান মিয়া, তাওহীদ শেখ সহ অনেকে অভিন্ন সুরে বলেন, আমাদের বাড়ীর সামনের পুরনো তালগাছ গুলি উপজেলা চেয়ারম্যান কেটে নিচ্ছে, আমরা বাধা দিলে আমাদের উল্টো মামলায় ফাসিয়ে দেবার হুমকি দেয়। আমরা ভয়ে আর কিছু বলিনি।
গোপালপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শিকদার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন,বহু বছরের পুরাতন এ তালগাছ সামাজিক বনবিভাগ কোন অবস্থাতে বিক্রির নির্দেশ দিতে পারেন না। আমি বাধা দিয়েছি উপজেলা চেয়ারম্যান কিনেছেন বলে দাবী করেন,পরে আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
বাগেরহাটের সামাজিক বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো.সাইদুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কোন ফলজ গাছ আমরা বিক্রি করিনা। তাছাড়া বনায়নে কোন তালগাছ আমাদের নাই, এছাড়া আমাদের বিক্রয়কৃত গাছের নাম্বার দেয়া রয়েছে। এর বাইরে আমরা কোন গাছ বিক্রি করি নাই। যদি কোন ব্যাক্তি আমাদের কার্যাদেশে তালগাছ কাটার কথা বলে থাকে তা মিথ্যা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসমিন ফারহানা বলেন, খবর পেয়ে আমি অফিস সহকারী সহ পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে আবার কাটছে কিনা জানিনা। তবে ্িবষয়টির খোজ খবর নিচ্ছি।
স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, বেপরোয়া এই চক্রটি এছাড়া কচুয়া-বাদামতলা সড়কের নরেন্দ্রপুর রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকার সরকারী রাস্তার পাশের তালগাছ সহ বিভিন্নপ্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
পরিবেশবাদীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার যখন বৃক্ষরোপনে জনগনকে উৎসাহিত করছে ঠিক তখনি বহু বছরের পুরাতন তালগাছসহ বনজ সম্পদ নিধন এবং এটা আত্মসাৎ করা গুরুত্বর অপরাধ। এটি কেবলমাত্র পরিবেশই নয়, মানব সভ্যতার জন্যও ক্ষতিকারক। তারা এ অপরাধি চক্রের দৃস্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী করেন।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম.মাহফুজুর রহমান মুঠো ফোনে বলেন, আমি গাছ কিনেছি। তালগাছ বিক্রি করেন নি ডিএফওর বরাত দিয়ে তাকে প্রশ্ন করলেই তিনি ক্ষেপে যান এবং বলেন আমার পিছনে লাগার ফল ভালো হবেনা। লিখে যা করতে পারো করো।