র্যাগিংয়ের এর নামে কখনো হাত-পা বেঁধে লাঠি বা স্ট্যাম্প দিয়ে নির্মম পিটুনি, কখনো যৌন নিপীড়ন, আবার পর্নো তারকাদের স্টাইলে অভিনয় করানোসহ নানা নির্যাতনের শিকার বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ করলেও উল্টো ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের সাথে ম্যানেজ করে চলার পরামর্শ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলা দেখভালের দায়িত্বে থাকা খোদ ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর নতুনভাবে আলোচনায় আসে র্যাগিং কালচার। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে আনেন নানা নির্যাতনের অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের আইবিএস পেইজে কয়েক বছর ধরেই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে আসছিলেন।
চলতি বছর এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আহসান উল্লা হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি জামিউস সানী এক শিক্ষার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করে।
তবে অভিযুক্ত বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি বলছেন, তিনি নিজেই র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন।
ফ্লোরে শুইয়ে খাটের উপর পা তুলে করা হত মারধর। মারধরের আলামত লুকাতে স্ট্যাম্প দিয়ে পায়ের তালুতে করা হত বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন। আবরার হত্যার পর গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা অমিত শাহ নির্যাতন করে এক শিক্ষার্থীর হাত ভেঙ্গে ফেলেন।
এসব অভিযোগর পরও ব্যবস্থা না নেয়ায় আগের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টাদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বর্তমান ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, যদি কোন সুনির্দিষ্ট বা লিখিত অভিযোগ আসে তাহলে দায়িত্বরত কারোই এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
রশীদ হলে ফেস্টের চাদা দিতে অস্বীকার করায় ৪০৬ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে রাত ৩টা অবধি পিটিয়ে হাত পায়ের হাড় ভেঙে দেয় সিভিল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৪ তম ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতা অয়ন, বাধন ও সৌরভ এবং মেক্যানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের মিনহাজ ও ফাহিম।
অভিযোগ পাওয়া যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলেও শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে বাধ্য করতো ছাত্রলীগ নেতারা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগের তীর ছাত্রলীগের দিকে ছুড়লেও বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি বলছেন, শুধু বুয়েটের সব সিনিয়রাই র্যাগিং ও নির্যাতনের সাথে যুক্ত।
চুল বড় রাখার অভিযোগে শেরে বাংলা হলের ১৮ তম ব্যাচের কয়েক শিক্ষার্থীকে স্ট্যাম্প ও লোহার রড় দিয়ে পেটান আবরার হত্যার এজাহারভুক্ত আসামী ও বুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল।
অভিযোগ করা হয়েছিল, শিক্ষকের সামনে পরীক্ষার হল ধরে নিয়ে আহসান উল্লা হলের ৩১৯ নম্বর রুমে নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত, শ্রভ্র , তন্ময় ও জ্যোতি ঠিকাদার।
বছর খানেক আগে এক শিক্ষার্থীকে সরাসরি মেরে ফেলার হুমকি দেয় আবরার হত্যার পর গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা অমিত শাহ ও মুজতবা রাফিদ।
শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এক সন্তানকে ভিন্ন রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার অপবাদ দিয়ে মারতে মারতে স্ট্যাপ ভেঙে ফেলা হয়। পায়ের লিগামেন্টও ছিড়ে ফেলা হয় ওই শিক্ষার্থীর।
দুই বছর আগে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, যৌন দৃশ্যের সাথে অভিনয় করার জন্য বাধ্য হতো শিক্ষার্থীদের। পর্ন তারকাদের স্টাইলে আপিত্তকর চরিত্র দৃশ্যায়ন করানো হতো তাদের দিয়ে।
এ বছর বড় তিনটি অভিযোগের বিচারের ক্ষেত্রে নিজের সক্রিয় অবস্থানের কথা জানান ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাকে জানালে আমি সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট এবং সহকারি প্রভোস্ট নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তাদের তদন্ত রিপোর্টে যে দুই জন শিক্ষার্থী এই র্যাগিংয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল তাদেরকে হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষার্থীরা নানা আকুতি জানালেও তা স্পর্শ করেনি প্রশাসনকে। প্রশাসন অভিযোগের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ছাত্রলীগকে ম্যানেজ করে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন গত মেয়াদের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টার ক্ষমতা বাড়ানোর পরার্মশ ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টার। এছাড়া একটি অনলাইন অভিযোগ গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বুয়েট শিক্ষাথীদের অনলাইন অভিযোগ সেলটি বিটিআরসি বন্ধ করে দিলেও নতুন একটি পেজ খুলেছেন শিক্ষার্থীরা।