মোংলায় সংখ্যালঘু পরিবারের জমি বিক্রি ও জবর দখলের অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০২১-০২-০৮ - ১৫:৩৭

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : মোংলার দিগরাজের বুড়িরডাঙ্গা এলাকায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী করে এক সংখ্যালঘু পরিবারের জমি জবর দখলের পর অন্যের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ভূমিদস্যু নাসির হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ওই ভূমিদস্যুর হয়রানী থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘদিন ধরে ওই সংখ্যালঘু পরিবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিয়েও ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। ভূমিদস্যুর কবল থেকে নিজেদের জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। এদিকে সরকারী রেকর্ডিয় একটি খাল দখল করে সেই খালের উপরই পাকা বাড়ী নির্মাণসহ পাশের আরো একটি খাল ভরাট করে দখলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে চিহ্নিত এই ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে দেয়া অভিযোগ, শালিস নামা ও ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরডাঙ্গা মৌজায় ডিপি-৫০১ খতিয়ানের ২০৪১, ২০৪৭ ও ২০৫১ দাগের এক একর বিশ শতক ভূমির মধ্যে খরিদ ও ওয়ারিশ সূত্রে ৬২ শতক ভূমির মালিক সুনিল তরফদার ও শ্যামল তরফদার। ২০০৩ সালের ১৬ মার্চ হতে তাদের নিকট থেকে ওই ভূধমি মৌখিকভাবে লিজ নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করতেন স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু নাসির হাওলাদার। এরপর ওই জমিতে মাছ চাষের সুবাদের থাকা নাসির হাওলাদার ওই জমির একটি জাল দলিল তৈরী করে নকল রেকর্ড ও পর্চা বানিয়ে সেখান থেকে প্রায় ১৩ শতক ভূমি দশ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন মোংলা পৌর শহরের ব্যবসায়ী আবু বক্কর রুবেলের কাছে। ১৩ শতক ভূমি খরিদ করে নিজ নামে নাম পত্তন করতে গেলে জাল দলিল আর ভূয়া রেকর্ড, পর্চার বিষয়টি জানতে পারেন ব্যবসায়ী রুবেল। এরপর বিষয়টি জানতে পারেন ওই ভূমির মুল মালিক সুনিল তরফদার। জমি জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর থেকেই ওই সংখ্যালঘু পরিবারের সাথে নাসির হাওলাদারের প্রকাশ্য বিরোধের সূত্রপাত ঘটে।
ভুক্তভোগী জমির মালিক সুনিল তরফদার বলেন, নাসির হাওলাদার তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের ওই ভূমিতে থাকা মালিকানা সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে দিয়েছেন। একই সাথে ওই মৎস্য ঘেরে তাদের না যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। হুমকি-ধামকির পর থেকে সুনিল তরফদার ন্যায় বিচার পেতে এবং তাদের নিজেদের মালিকানা জমি দখল নিতে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আবদুল খালেকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন। পরে খুলনার মেয়র বিষয়টি সমাধানের জন্য বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল চন্দ্র রায়কে লিখিত নির্দেশ দেন। এরপর ইউপি চেয়ারম্যানের দপ্তরে এ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে প্রথম বসাবসিতে ভূমি দস্যু নাসির হাওলাদার পরবর্তীতে বসার সময় নিয়ে চলে আসেন। পরে তিনি চেয়ারম্যানের ডাকে সালিশি বৈঠকে আর উপস্থিত হননি।
অপরদিকের প্রতাণার শিকার মোংলা পৌর শহরের ব্যবসায়ী রুবেল জানান, নাসির হাওলাদার প্রায় আড়াই বছর আগে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে তার নিকট ১০ লাখ টাকায় ১৩ শতক জায়গা বিক্রি করেন। এর পর তিনি নাম জারি করতে গেলে জানতে পারেন ওই ভূমির মালিক সুনিল তরফদার। ওই কারণে স্থানীয় ভূমি অফিস আর তাকে নাম জারি কওে দেননি। এরপর খুলনা সিটি মেয়রের মধ্যস্থতায় তিনি (রুবেল) নয় লাখ টাকা ফেরত নিয়েছেন। এখনো এক লাখ টাকা ফেরত পাননি তিনি।
বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য তিনি উভয় পক্ষকে নিয়ে বসাবসি করেছিলেন। বিবাদী নাসির হাওলাদার তার কাগজপত্র সংগ্রহের কথা বলে সময় নিয়ে পরবর্তীতে আর আসেননি। তাই কোন সমাধান তিনি করতে পারেননি বলেও জানান তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন, বুড়িরডাঙ্গা এলাকার সরকারী রেকর্ডিয় শিংজোড়া খাল দখল করে খালের উপর পাকা বাড়ী নির্মাণ করেছেন এলাকার চিহ্নিত ভূমি দস্যু নাসির হাওলাদার। এছাড়া তিনি একই এলাকার শেলা নদীর পাশ খাল ভরাট করে দখলে নিয়ে বিক্রির পায়তারা করছেন বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এ সব বিষয়ে অভিযুক্ত নাসির হাওলাদার বলেন, বিশ বছর ধরে ওই জমি আমার দখলে রয়েছে। ভূলবশত বিআরএসে সুনীলদের নাম এসেছে। বিআরএস ভাঙ্গতে/সংশোধনে আমি ল্যান্ড সার্ভে মামলা করেছি। এরমধ্যে সুনীলেরা সেখানে সাইনবোর্ড দিলে আমি সেটি তুলে ফেলে দিয়েছে, যেহেতু এটা নিয়ে মামলা করেছি, মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কিভাবে সাইনবোর্ড দেয়, ফেলে দিয়েছি।
আর রুবেলের কাছে জমি বিক্রির বিষয়ে বলেন, ব্যবসায়ী রুবেলের কাছে জমি বিক্রিকালে আমি জানতাম না যে ওই জমি সুনীলদের নামে বিআরএস হয়েছে। জানার পর ব্যবসায়ী রুবেলের টাকা ফেরত দিয়েছি।
খাল দখলের বিষয়ে বলেন, আমি কোন খাল দখল করিনি। তবে একজন চাইলে অস্থায়ীভাবে খাল দখল কিংবা বসবাস করতে পারে। কিন্তু সরকারী খাল বিক্রি করার সুযোগ নেই, কারণ বিক্রি করতে গেলে তো কাগজপত্র লাগে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, ওই খাল দুইটি মেপে সামীনা চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। সেখানে নাসির হাওলাদারসহ অন্যান্যদের স্থাপনার কিছু কিছু অংশ বেঁধে গেছে। তাদেরকে নিজ দায়িত্বে স্থাপনা অপসারণের নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশ মোতাবেক তারা কাজ না করলে অবশ্যই তা উচ্ছেদ করে দেয়া হবে।