আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পর সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় এবার এগিয়ে এসেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে চলা বন্দরের ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পশুর চ্যানেলে জাহাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া তেলজাতীয় পদার্থ অপসারণ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কিনেছে একটি অয়েল সুইপিং জাহাজ। আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অয়েল সুইপিং এই জাহাজটি মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছাবার কথা রয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার এম ওয়ালিউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ফিনল্যান্ড থেকে তৈরী করা সাড়ে ১৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ঘন্টায় ১৮ নটিক্যাল মাইল গতিবেগে চলাচল উপযোগী এই অয়েল সুইপিং জাহাজটির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান ও হারবার মাস্টার এম ওয়ালিউল্লাহ’ ফিনল্যান্ডে গিয়ে গত ৮ অক্টোবর জাহাজটির নৌপথে চলাচল ও পানির উপরে ছড়িয়ে পড়া অয়েল সুইপিং’এর (টেষ্ট ট্রায়াল) প্রাথমিক পরীক্ষা প্রতক্ষ্য করেন। টেষ্টে ট্রায়াল সফলতার পর ফিনল্যান্ড থেকে ফেরি জাহাজের করে ওই জাহাজটি আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মোংলা বন্দরে আনা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই অয়েল সুইপিং এই জাহাজটি মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: জহিরুল হক জানান, মোংলা বন্দর ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম একটি অয়েল সুইপিং জাহাজ কেনা হলো। অনেক আগে থেকেই প্রয়োজন ছিলো মোংলা বন্দরের এই অয়েল সুইপিং জলযান সংগ্রহের। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে চলা বন্দরের ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পশুর চ্যানেলে কখনো-কখনো জাহাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া তেলজাতীয় পদার্থ দ্রুত অপসারণ জরুরী হয়ে দাড়ায়। বিগত ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর মোংলার অদূরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েল বোঝাই এম,ভি সাউদার্ন স্টার সেভেন নামের একটি অয়েল ট্যাঙ্কার ডুবে সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এতোটা হুমকির মধ্যে পড়ে যে, ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনকে বাঁচাতে ছুটে আসতে হয় খোদ জাতিসংঘসহ আর্ন্তজাতিক বিশেষজ্ঞদের। এই অবস্থায় সুন্দরবনের মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে জাহাজ থেকে ছড়িয়ে পড়া তেলজাতীয় পদার্থ অপসারণ করতে অয়েল সুইপিং জনযান কেনা হয়েছে। মাত্র সাড়ে ১৪ মিটার দৈর্ঘের জনযানটি প্রয়োজনে সুন্দরবনের ছোট-ছোট খালে গিয়েও পানিতে ছড়িয়ে পড়া তেলজাতীয় পদার্থ সুইপিং করতে পারবে। মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের পানি সুরক্ষার পাশাপাশি এই অয়েল সুইপিং জলযান সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মোংলা বন্দরের অয়েল সুইপিং জলযান সংগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে সুন্দরবন রক্ষায় গবেষণাধর্মী পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এত করে বিশে^র বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই জলাভূমির বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, ২৩৪ প্রজাতির মাছ, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা, ১ প্রজাতির লবস্টার, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও সুন্দরী গাছসহ ১৮৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রক্ষায় সহায়ক হবে। নানা কারণে অস্বিত্ব সংকটে থাকা সুন্দরবন পানি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।