ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেন আদনানকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, ঘটনা ধামাচাপা দিতে অপচিকিৎসা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক মামলায় জড়িয়ে হয়রানির ঘটনায় রাজাপুর থানার সাবেক বিতর্কিত ওসি মুনির উল গিয়াসকে ১৮ মার্চ স্বশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত দায়েরকৃত রিভিশন মামলার বিগত শুনানীতে আসামীদের তলব করলেও ১১ মার্চ রবিবার ধার্য তারিখে আসামীরা উপস্থিত না হওয়ায় শুনানীআন্তে মাননীয় বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করে আদেশ প্রদান করেন। শুনানী কালে মামলার বাদী কলেজ ছাত্র আদনানের বিরুদ্ধে রাজাপুর থানার ‘স্বঘোষিত রাজা’ ওসি মুনির আক্রোসমূলক ভাবে অন্যের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনায় দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের একটি মামলায় আদনান ও তার ছোট ভাই মুরাদকে আসামী করন, আদনানকে চুরি মামলায় সন্দিগ্ধ আসামী করন ও নন জিআর একটি মামলাসহ ৪/৫চি জিডি দায়েরের বিশদ বর্ননা শুনে জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেন।
নির্যাতিত কলেজ ছাত্র আদনানের আইনজীবী আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ৭ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টায় পুলিশ বিভাগের ইমেজ নষ্টকারী রাজাপুর থানার বিতর্কিত ওসি মুনির উল গিয়াস এক এসআইকে পাঠিয়ে আদনান ও তার ছোট ভাই কামরুল হাসান মুরাদকে টিএন্ডটি রোডস্থ বাসা থেকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় ডেকে আনেন। সেখানে আসামী ওসি মুনিরের কক্ষে ডুকিয়ে আদনানকে ৭ ডিসেম্বর বেলা ১০টা থেকে ১টার মধ্যবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার ভাই ওলিউর রহমান ওলির বাসায় সংগটিত একটি চুরি মামলায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। প্রায় ৪০বছর সৌদি আরবে চাকুরি করে গত ২০১৫ সালে দেশে ফিরে মারা যাওয়া মোঃ শাহজাহানের পুত্র কলেজ ছাত্র আদনান তার এ অন্যায় দাবীতে বিস্মিত হয় ও কোন প্রকার স্বীকারোক্তি প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়।
তখন ওসি তার কক্ষ থেকে ছোটভাই মুরাদকে জোর পূর্বক বের করে দিয়ে ২নং আসামী এসআই নজরুল কে লাঠি নিয়ে তার কক্ষে ডাকে। এক পর্যায়ে তারা দুই আসামী মিলে নিরীহ আদনানকে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বেধরক লাঠিপেটা করে, নাকমুখে পানি ডালে ও কারেন্টশকসহ মধ্যযুগীয় কায়দায় টানা দুই ঘন্টা নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সে অচেতন হয়ে পরলে আসামীরা তড়িগড়ি করে মধ্যরাতে এএসআই সঞ্জিবন বালাকে দিয়ে পুলিশ পিকাপে করে আদনানকে রাজাপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা দেখে বরিশাল শেরেবাংলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিলেও ওসি মুনির পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে আবাসিক চিকিৎসক তথা ৪নং আসামী রাসেলকে হাসপাতাল এনে রেজিষ্ট্রারে নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র গোপন করে সামান্য বুকে ব্যাথা মর্মে উল্লেখ করেন।
এমন কি ঘটনা গোপন রাখতে ৮ডিসেম্বর সকালে অসুস্থ আদনানকে উক্ত চুরি মামলার সন্দিগ্ধ আসামী মর্মে আদালতে প্রেরন করলে তাকে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়। প্রায় দেড় মাস হাজত বাসের পর জামিন বাইরে বের হয়ে সেদিনই হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে নির্যাতিত কলেজ ছাত্র আদনান বিজ্ঞ আমলী আদালত ওসি মুনির, এসআই নজরুল, এএসআই সজ্ঞিবন বালা ও আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রাসেলকে আসামী করে একটি নালীশি মামলা দায়ের করে। কিন্তু পুলিশের উচ্চ্ পর্যায়ের তদবীর ও চাপের মুখে আসামীরা প্রভাবশালী তথা পুলিশ সদস্য হওয়ায় তাদের ছাড় দিতে মামলাটি খারিজ করেন। তাই ন্যায় বিচার ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার নির্যাতিত কলেজ ছাত্র আদনান বাদী হয়ে ঝালকাঠি বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই রিভিশন মামলাটি দায়ের করেন।
এব্যাপারে নির্যাতিত কলেজ ছাত্র বাদী আদনান ও তার আইনজীবীরা বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইন ২০১৩ সনের ১৫ (১) ধারার আইনে বিচার চেয়ে মামলাটি আনায়ন করা হয়েছিল। অথচ আদালত উল্লেখিত আইনে প্রতিবিধান না করে বা কোন প্রকার মতামত নাদিয়ে দঃবিঃ ৩২৫ ধারায় অভিযোগের সত্যতা নেই মর্মে অভিহিত করে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। এতে নিরিহ-নিরপরাধ ও নির্যাতিত কলেজ ছাত্র বাদী ইমরান হোসেন আদনান ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়ে উচ্চ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করেছেন। যদি এখানেও তারা ন্যায় বিচার না পায় যায় তবে ন্যায্য বিচারের জন্য যতোদূর যেতে হয় ততোদূর পর্যন্ত যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।