আহমেদ ফরিদ, রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলায় ‘আই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় সাম্প্রদায়িক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করার দায়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিন্ডিকেট সদস্য মো. মামুন আ. কাইউম।
তিনি জানান, সিন্ডিকেট সভায় চারুকলার অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমানকে আগামী ১০ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ধরনের পরীক্ষা কার্যক্রমে নিষিদ্ধ করা হয়।
এছাড়া শিক্ষক জিল্লুর রহমানের ‘সহযোগী অধ্যাপক’ পদে পদন্নোতি হওয়ার সময় এলে সে সময় থেকে আরো ৫ বছর পরে তিনি পদোন্নতি পাবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “ডিনের পদ থেকে অব্যাহতির জন্য আইনগত কোনো বাধা যদি না থাকে, তাহলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।”
গত ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের ‘আই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দুই নম্বর সেটের ৭৬ নম্বর প্রশ্নটি ছিল- ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি? উত্তরের জন্য দেওয়া চারটি অপশন ছিল- (ক) পবিত্র কুরআন শরীফ (খ) পবিত্র বাইবেল (গ) পবিত্র ইঞ্জিল (ঘ) গীতা। গীতার আগে ‘পবিত্র’ ছিল না।
একই সেটের ৪১ নম্বর প্রশ্নটি ছিল- ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়েনমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে? পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে এ দুটি ‘সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তবে এ ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন মোস্তাফিজুর রহমান।
গত ২৮ অক্টোবর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবু বকর মো. ইসমাইল ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সেসময় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কমিটির সদস্য ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “আমাদেরকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল, সে সময়ের মধ্যেই দিয়েছি। এখন সিন্ডিকেটে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা আমি বলতে পারব না।”
এদিকে, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষক অধ্যাপক হাছানাত আলীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাহিদ হায়দারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাহিদ আইবিএ’র সান্ধ্যকালীন এমবিএ নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলো।
তবে শিক্ষক হাছানাত আলীকেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সদ্যবহার করার বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান সিন্ডিকেট সদস্য মো. মামুন আ. কাইউম।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইন্টার্নশিপ পেপারে স্বাক্ষর দেওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষক হাছানাত আলীকে মারধর করে তার অধীনে ইন্টার্নশিপ করা শিক্ষার্থী নাহিদ হায়দার। ঘটনা পর পরই নাহিদকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার দিন রাতেই শিক্ষক হাছানাত মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনা তদন্তে ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মহসিন-উল-ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।