খুলনা অফিস : খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও বাড়ি ভাংচুরের ঘটনার সাথে জড়িত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ব্যপারে রূপসা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের তৎপরতার কারণে এলাকা এখন শান্ত। রবিবার পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান বলেছেন, ‘এলাকা শান্ত। নতুন কোন ঘটনা আর না ঘটে সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় শিয়ালী গ্রামে দুর্বৃত্বদের হামলার ঘটনায় রূপসা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতির বাদী হওয়া মামলাটি রূপসা থানা পুলিশ নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করে। যার নংÑ৭(৮)২০২১। ধারা-১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/১৬(২)তৎসহ ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৫৩/৪৪৭/৪৪৮/৪২৭/২৯৫ দঃবিঃ। মামলা রুজুর পরই জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে রূপসা থানা পুলিশ এজাহারনামীয় ৯ জনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হল-শরিফুল ইসলাম (৪০), শেখ মঞ্জুরুল আলম (৪২), শরিফুল শেখ (৩০) রানা শেখ (২২), আকরাম ফকির (৪০), সোহেল শেখ ৯২০), সম্রাট মোল্যা (২৪), জামিল বিশ^াস (২৪) শামিম শেখ (২২) ও মোমিনুল ইসলাম (২৮)।
রবিবার ঘটনাস্থলে শিয়ালী গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা হেছে আতংক। শিয়ালী পূর্বপাড়া হরি মন্দিরের দেব-দেবীর বিগ্রহ ও শিয়ালী দূর্গা মন্দিরের দেব-দেবীর বিগ্রহ পাহাড়া দিতে দেখা গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের। শিবনাথ ধরের বাড়ি ভাংচুরের দৃশ্য এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। শিবনাথ ধরের বাড়ির একটি সমাধিও রেহাই পায়নি দূর্বৃত্বদের রোষ থেকে।
এ দিকে রবিবার পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকেই শিয়ালী গ্রামে র্যাব-৬ এর টহল চলছে। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজনকে সান্তনা দিতে ছুটে যান শিয়ালী গ্রামে।
ভুক্তভোগীরা জানান, অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্বরা। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও জেলা ও থানা পুলিশের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পূর্ব শত্রুতার ঘটনার জের ধরে পাশর্^বর্তী চাদপুর গ্রাম থেকে শতাধিক ব্যক্তি দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে শিয়ালী গ্রামে হামলা চালায়। দূর্বৃত্বরা এসময় প্রিতম মেশিনারিজ, গনেশ মল্লিকের ঔষধের দোকান, শ্রীবাস মল্লিকের মুদি দোকান, সৌরভ মল্লিকের মুদি দোকান, অনির্বাণের চায়ের দোকানসহ কয়েকটি দোকান ভাংচুর করে। দূর্বৃত্বরা শিয়ালী পূর্বপাড়া হরি মন্দিরের দেব-দেবীর বিগ্রহ, শিয়ালী দূর্গা মন্দিরের দেব-দেবীর বিগ্রহ,শিবনাথ ধরের পারিবারিক মন্দিরের দেব-দেবীর বিগ্রহ ও শিয়ালী মহাশশ্মান মন্দিরের কয়েকটি দেব-দেবীর বিগ্রহ ভাংচুর করে। এসময় শিবনাথের ঘর থেকে দূর্বৃত্বরা কয়েক লাখ টাকার মালামালও লুট করে বলে শিবনাথের অভিযোগ।
রূপসা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন জানান, ইতিমধ্যে ১০ জন আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত। এলাকায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে কোন ঘটনা না ঘটতে পারে সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।