মোঃ আব্বাস আলী, সহকারী অধ্যাপক: রমযান মাসের রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে চতুর্থ। রমজান গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম এবং জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায়। রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে সিয়াম পালন করা ব্যক্তির। রোজার প্রস্তুতি কেমন হবে সুস্থ থাকতে হলে সেটা জানার প্রয়োজন। রমজান মাসের ফজিলত অনেক, আর এই ফজিলত পবিত্র কোরান ও হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়ে বেশী ঘ্রানযুক্ত’: আল হাদিস
‘ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন’: আল হাদিস।
‘রোজাদারের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়’: আল হাদিস।
‘রমজানের শেষ রাতে সকল উম্মতকে মাফ করা হয়’: আল হাদিস।
‘রমজান জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল’: আল হাদিস।
‘রোজা কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির জন্য শুপারিশকারী হবে’: আল হাদিস
‘রোজার পুরষ্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন’: আল হাদিস।
বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন শাবান মাসে উপনীত হতেন, তখন মাহে রমজানকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে আবেগভরে আল্লাহর দরবারে এ প্রার্থনা করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ) আমাদের প্রস্তুতি আমরা কি কি খাব? কি বাজার করব? কত কেজি চিনি, বেশন, ডাল, পেয়াজ ইত্যাদি। আমাদের উচিৎ ছিল আমাদের গুনাহ গুলোকে কিভাবে ক্ষমা করান যায় তার সংকল্প করা।
সুস্থ থাকার জন্য রোজায় কি খাব নাঃ দোকানিরা রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, অলিতে-গলিতে, হাটে-বাজারে সাজিয়ে রাখে। এসব ইফতারির মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, ডাল বড়া, সবজি বড়া, আলুর চপ, খোলা খেজুর, হালিম, জালি কাবাব, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, নানা রং মিশ্রিত বাহারি শরবত। তাছাড়া মুখরোচক বিরিয়ানি ও তেহারি তো আছেই। প্রশ্ন হলো এসব মুখরোচক খাবার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে কিনা। ভেজাল তেল, বেসন ও কৃত্রিম রং মেশানো হয়েছে কিনা সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
সুস্থ থাকার জন্য রোজায় কি খাবঃ একজন রোজাদার ইফতারে কি খাবেন তা নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের ওপর। দোকানের তৈরি ইফতারি ও সাহরি না খাওয়াই ভালো। সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারিতে খেজুর বা খুরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, পেঁয়াজু, বুট, ফরমালিন অথবা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত মৌসুমি ফল থাকা ভালো। কারণ ফলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়।
সাহরির খাবার মুখরোচক, সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন। অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়। ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন। সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে তাই সাহরির সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি বেশি খাবার খেতে হবে, তা মোটেই ঠিক নয়, কারণ চার-পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়ে যায়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো, বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।
ক্যালোরি রেস্ট্রিকশনের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দিনের গৃহীত ক্যালোরির পরিমাণ কমিয়ে আনলে তা শারীরিক স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং বেশকিছু জটিল অসুখের ফলে সৃষ্ট জটিলতা কমিয়ে আনে; যেমন রক্তনালীতে চর্বি জমে সৃষ্ট অ্যাথেরোসেক্লারোসিস, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ। করোনা ভাইরাসের এ সময়ে হাঁচি, কাশির মতো ছোঁয়াচে রোগ বেশি দেখা যায়, তাই যারা এতে আক্রান্ত, তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকা উচিত। দিনে গরম সময়ে ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা উচিত।
লেখকঃ মোঃ আব্বাস আলী
সহকারী অধ্যাপক ( ব্যবস্থাপনা বিভাগ)
জি টি ডিগ্রী কলেজ। কোটচাঁদপুর। ঝিনাইদহ।