মো:নজরুল ইসলাম,ঝালকাঠি : বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে “শিক্ষকরা আসেন না ক্লাসও হয় না শিরোনামে”সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে নলছিটি উপজেলা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের । সংবাদ প্রকাশের পরপরই ঝালকাঠি জেলা প্রসাশক মো: হামিদুল হক বিষয়টি নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো:আশ্রাফুল ইসলাম কে ওই স্কুলটি পরিদর্শনের নির্দেশ দেন । সংবাদ প্রকাশের পর ওই স্কুলের শিক্ষক ও কমি টির দৌরঝাপ শুরু হয়।সে অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মোজাম্মেল হক ও ক্লাস্টার দায়িত্বরত সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা ঊর্মি গতকাল সোমবার বেলা ২টায় উপজেলার পশ্চিম সুবিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে সচিত্র সংবাদ ও স্কুলের হালচাল অনিয়ম, দুর্নিতি ও শিক্ষকরা স্কুলে না এসে বেতন তোলা,খেয়াল খুশিমতো স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় সই করে চলে যাওয়া,এবং অফিস কক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং মনিটারিং বোর্ড না টানানোসহ স্কুলের অবকাঠামো সম্পর্কে সংবাদের সত্যতা পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন।
জানা গেছে, কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ে শিক্ষককের সংখ্যা চারজন। তবে তারা কেউ নিয়মিত স্কুলে আসেন না। কেউ কেউ রেখেছেন বদলি বা ভাড়াটে শিক্ষক। তারাও থাকেন অনুপস্থিত। এ কারণে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলা আর আড্ডা মেরে বাড়ি যায়। স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১২টায়। ফলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। অন্য শিক্ষকেরাও ক্লাস নেন মর্জিমতো। শিক্ষার্থীরা যখন খুশি আসে, আবার চলেও যায়। ভাঙাচোরা টিনশেড ঘরে চলে দু শিফটে পাঠদান। নেই অফিসকক্ষ ও শৌচাগার। এই করুন ধন্যদশা অবস্থা ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পশ্চিম সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
সরেজমিনে অনুসন্দানে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি টিনশেড ঘরের দক্ষিণ পাশের চালা ভেঙে গেছে। কক্ষগুলোতে তিন-চারটি করে বেঞ্চ। পঞ্চম শ্রেণিতে ৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে কেউ নেই, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৫ জনসহ মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী এসেছে। যদিও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ জন। ওই সময় বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের উপস্থিতি শতভাগ দেখানো হলেও শিক্ষকরা কর্মস্থলে না গিয়ে মাস শেষে বেতন নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিকের কোন কার্যক্রম নেই। শিশুদের শিক্ষা উপকরণগুলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসি আক্তারের ছেলে ভেঙে ফেলেছেন বলে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা জানান।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান ফোরকান জানান, শিক্ষকরা সঠিক সময়ে আসেন না। তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা প্রাথমিক অফিসের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর সরেজমিন পরিদর্শনে এসে বুঝতে পারলাম এভাবে একটি স্কুল চলার কথা নয়। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির বিষয়ে এ পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তবে এসব তথ্যের সত্যতায় বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তিনি জানান।
এব্যাপারে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো:আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত চলছে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তদন্ত অব্যহত থাকায় তিনিকোন মিডয়িায় মন্তব্য করতে চান না বলে জানান।