যশোর : শিক্ষামন্ত্রীর পায়ে পড়ে এমপিওভুক্তির দাবি জানালেন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। শুধু তা-ই নয়, জাতি গড়ার কারিগররা মন্ত্রীর যাত্রাপথে শুয়ে পড়ে পথ আটকেও দেন। দিনব্যাপী সফরে যশোরে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সার্কিট হাউজমুখী শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িবহর থমকে যায় শিক্ষকদের এই অভিনব কর্মসূচিতে। মন্ত্রী যশোর উপশহর ক্রীড়া উদ্যানে আয়োজিত ৪৬তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন শেষে সার্কিট হাউজে ফিরছিলেন। এসময় রাস্তা আটকে রাখা শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড়সাপেক্ষে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে সচিব সোহরাব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল আলীমসহ সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও যশোরের জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর যশোর আগমনের খবর জানতে পেরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সার্কিট হাউজের কাছে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। মন্ত্রী সকাল ৯টায় তার নির্ধারিত কর্মসূচি দেশের আটটি শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত ৪৬তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বের হয়ে যান। এরপর মন্ত্রীর ফিরে আসার জন্য মানববন্ধনসহকারে অপেক্ষায় থাকেন ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেলা ১২টার কিছু আগে মন্ত্রীর ফিরতি গাড়িবহর প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছুলে শিক্ষকরা মানববন্ধন ছেড়ে সড়কের ওপর অবস্থান নেন। এসময় শিক্ষকরা তাদের দাবির পক্ষে নানা বিভিন্ন শ্নোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষকদের কেউ কেউ সড়কে শুয়ে পড়েন। দৃশ্যত বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নামেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসময় একজন নারী শিক্ষক ভিড় ঠেলে এগিয়ে মন্ত্রীর পা জাপটে ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। ওই নারী শিক্ষক বৈষম্যের কারণে তাদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি তুলে ধরে এমপিওভুক্তির দাবি জানান। মন্ত্রী ওই নারী শিক্ষকের মাথায় হাত দিয়ে তাকে আশ্ব¯— করার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষিকাকে দ্রুত সরিয়ে নেন। এরপর শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন শিক্ষকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আপনার যে আচরণ করছেন তাতে শিক্ষক সমাজের মানহানি হয়।’ তিনি আরো বলেন , আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় কিছু হচ্ছে না। এ নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আমাকে শুনতে হয়েছে, আমি সরকারের মন্ত্রী না, শিক্ষকদের। আমি বরাবর বলি আমি শিক্ষকদের মন্ত্রী। শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, মান উন্নয়ন করতে হলে শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে। সেজন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। অর্থমন্ত্রীর হতে-পায়ে ধরেছি। অনেক চেষ্টায় তিনি কিছুটা নরম হয়েছেন।’ মন্ত্রী বলেন, বৈষম্য নিরসনে অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি কমিটি করেছে। এ কমিটি অর্থছাড়ের ব্যাপারে চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে আমি দোজখে যেতেও রাজি। প্রয়োজনে আবারো অর্থমন্ত্রীর হাত-পায়ে ধরবো। তবে আপনারা এ ধরনের আচরণ করে অর্থ প্রাপ্তির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েন না। আমি ঢাকায় গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বলবো যশোরের শিক্ষকরা আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে একটু নজর দেবার আবেদন করেছেন। আপনারা দোয়া করেন যাতে অর্থমন্ত্রীর মন একটু নরম হয়। তাহলেই সব সমস্যা কেটে যাবে।’ বক্তব্য শেষ হলে শিক্ষকরা মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এরপর তারা সড়ক ছেড়ে দিলে মন্ত্রীর গাড়িবহর সার্কিট হাউজের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।