সুন্দরবনের চর থেকে মৃত বাঘ উদ্ধার

প্রকাশঃ ২০২১-০৩-২০ - ১৭:৫১

তিন বছরে ৩টি বাঘের মৃতদেহ ও একটি চমড়া উদ্ধার

শরণখোলা প্রতিনিধি : পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ এলাকা থেকে আরো একটি মৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘিনী) উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার (১৯মার্চ) রাত ৮টার দিকে নিয়মিত টহলকালে রেঞ্জের ২নম্বর কম্পার্টমেন্টের ধনচেবাড়িয়ার চরে বাঘের মৃতদেহটি দেখতে পান বনরক্ষীরা। পরে সেটি উদ্ধার করে ওই রাতেই রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসা হয়। শনিবার সকাল ১০টা দিকে ময়না তদন্ত শেষে নমুনা সংগ্রহের করে বাঘের মৃতদেহটি রেঞ্জ অফিস চত্বরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে গত তিন বছরে শরণখোলা রেঞ্জ থেকে তিনটি বাঘের মৃতদেহ এবং বাঘের চামড়া উদ্ধার হল।
এদিকে, সুন্দরবনে বাঘ মৃত্যুর ঘটনায় পূর্ব বনবিভাগের বাগেরহাট সদর রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শরণখোলা স্টেশন কর্মকতা মো. আব্দুল মান্নান, বগী স্টেশন কর্মকর্তা সাদিক মাহমুদ ও সুপতি স্টেশন কর্মকর্তা মো. সাইফুল বারী। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে ডিএফও অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বনবিভাগ জানিয়েছে, ১৯মার্চ (শুক্রবার) সন্ধ্যা থেকে নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন সুপতি স্টেশনের বনরক্ষীরা। রাত ৮টার দিকে ধরচেবাড়িয়া চরের কাছাকাছি এলে বাতাসে পচা দুর্গন্ধ টের পান তারা। এসময় সামনে এগিয়ে বাঘের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে সেটি উদ্ধার করে রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসেন টহলরত বনরক্ষীরা।
বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, এ আগে ২০১৯ সালের ২১আগস্ট এই রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ছাপড়াখালীর চর থেকে একটি এবং ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কোকিলমনি টহল ফাঁড়ির কবরখালী এলাকা থেকে আরেকটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দুটি বাঘের নমুনা সিআইডি এবং পুলিশের মাধ্যমে ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা পর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া, গত ২০ জানুয়ারী শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ক্রেতা সেজে সুন্দরবনের একটি পূর্ণ বয়স্ক বাঘের চামড়াসহ গাউস ফকির নামে এক চোরা শিকারীকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা।
ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জি এম আব্দুল কুদ্দুস জানান, মৃত মাদি বাঘটির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শরীরে পচন ধরা বাঘটির দৈর্ঘ ৭ফুট, উচ্চতা ৩ফুট ২ইঞ্চি, বেড় ৩ফুট ৬ইঞ্চি। দাঁত, নখ পরিপূর্ণ আছে। পাকস্থলিতে বন্য সজারুর কাটা পাওয়া গেছে। লিভার, হার্ট, ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে। ১৪-১৫ বছর বয়সী বাঘটি এক সপ্তাহ আগে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস জানান, ময়না তদন্তের পর নমুনা হিসেবে বাঘের চামড়া, লিভার, হার্ট, জিহব্বা এবং পাকস্থিতে পাওয়া সজারুর অবশিষ্টাংশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পূর্ণ বয়স্ক বাঘটি বয়স্কজনিত অথবা লিভার সিরোসিসে মারা যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ফরেনসিক ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করার পরে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।
শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ময়না তদন্তে মৃত বাঘটির বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নমুুনা ঢাকায় ুফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হবে। ল্যাব টেস্টে মৃত্যু কারণ জানা যাবে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বাঘটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এ আগে মারা যাওয়া দুটি বাঘের ফরেনসিক টেস্টে স্বাভাবিক মৃত্যুর রিপোর্ট এসেছে।