আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস মেলা। এ উপলক্ষ্যে দুবলার চরে বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে নানা উৎসব। দিনকে দিন এ মেলা হয়ে উঠেছে একটি সার্বজনীন উৎসবে। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী, পুরুষ ও দর্শনার্থীসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। উৎসব দেখতে আসেন অসংখ্য পর্যটকরাও। শনিবার ভোরে পূর্ণ্য স্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এই রাস উৎসব। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এ মেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এছাড়া রাস উপলক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং দুবলার চর রাস উৎসব জাতীয় কমিটির আহবায়ক নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাগেরহাট-৪ এর সাংসদ ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-৩ এর সাংসদ তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-২ এর সাংসদ মীর শওকত আলী বাদশা এবং খুলনা-২ এর সাংসদ মিজানুর রহমানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে এ উৎসবে অংশ নিতে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন বিভাগ আটটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সব পথে বন বিভাগ, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এদিকে রাস মেলায় হরিণসহ অন্য বন্যপ্রাণী নিধনের আশংকায় বন বিভাগসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী তা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস মেলায় আগতদের দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা রাস পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে পূজা অর্চনা করবেন তাদেরকে পুণ্যার্থী ধরা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি অনুমতি ফি ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে মেলা উপভোগ করার জন্য আগতদের দর্শনার্থী ধরা হয়েছে। দর্শনার্থীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি অনুমতি ফি ২১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে আকার ভেদে বিভিন্ন নৌযানের জন্য আলাদা আলাদা ফি।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, এবার রাস মেলায় যেতে ৮টি নিরাপদ রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ২ থেকে ৪ নভেম্বর এই তিন দিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে এবং প্রবেশের সময় নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত রুটে পছন্দ মতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবেন। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি/সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত সনদপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ও বাজি ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশীয় যে কোনও অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকে যাত্রীদের বিরত থাকতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল-আল-মামুন বলেন, পুণ্য স্নানে যাওয়ার নির্ধারিত রুটে বন বিভাগ, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা তীর্থযাত্রী এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দেবে। এর বাইরের সকল রুট অনিরাপদ। নিয়ম বহির্ভূতভাবে কেউ অন্য কোনো রুটে প্রবেশের চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে এ বন কর্মকর্তা জানান।
বন বিভাগের খুলনা (সুন্দরবন) সার্কেলের বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধূরী জানান, রাস মেলাকে ঘিরে হরিণসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী চোরা শিকারীদের অপতৎপরতার ও সম্ভাব্য নাশকতা সৃষ্টির আশংকা মাথায় রেখে এবার বন বিভাগসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কঠোর সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি আরো জানান, রাস মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।