ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি// খুলনার ফুলতলায় দিনে দুপুরে ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ফারুক মোল্যা হত্যার তিন সপ্তাহ পর ১১ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহারভুক্ত করার নিদের্শনা দিয়েছেন। থানা পুলিশের গড়িমিশির কারণে দেরিতে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত ফারুক হোসেন মোল্যার স্ত্রী মাহাফুজা বেগম।
আদালতে দায়েরকৃত মামলায় ফুলতলার দক্ষিণডিহি গ্রামের আলাউদ্দিনের পুত্র শুভ (২২), আব্দুর রহমানের পুত্র গিয়াস উদ্দিন (৪১), মধ্যগ্রামের মৃতঃ মুনছুর গাজীর পুত্র রসুল গাজী (২৮), বুড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের রমজানের পুত্র শাহজাহান (৪০), মধ্যডাঙ্গা গ্রামের গনি সিকদারের পুত্র ফারুক সিকদার (২৮), বুডিয়ারডাঙ্গা গ্রামের মৃতঃ মোহাম্মদ আলীর পুত্র মনির (২৭), পয়গ্রাম কসবা গ্রামের কালাম মোল্যার পুত্র আসলাম মোল্যা (২৯), দক্ষিণডিহি গ্রামের ওহাব মোল্যার পুত্র রহিম (৩৮), বুড়িয়ারডাঙ্গা গ্রামের শহিদুলের পুত্র মোস্তফা শেখ (২৫), নদালী গ্রামের ছোট্ট এর পুত্র দাই আকরাম (৫১) এবং নাউদাড়ি গ্রামের মৃতঃ ইয়াছিন সরদারের পুত্র মোমিন সরদার (৫৫) এর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬/৭ জনকে মামলার আসামী করা হয়।
ফারুক হোসেন মোল্যা (৫২) ফুলতলা সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান থাকায় আসামীরা বিভিন্ন সময়ে তার সাথে বিরোধ করে আসছিল। ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৯ মার্চ ২০২৫ আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টায় আসামীরা মোবাইল করে ফারুক মোল্যাকে ইউনিয়ন পরিষদের ডেকে নেয়। পরবর্তীতে ফুলতলা ইউনিয়নের মধ্যডাঙ্গা গ্রামস্থ সনুরগেট এলাকায় শালিশ বৈঠকের কথা বলে সেখানে ডাকে। ঘটনাস্থলে পৌছানোর সময় উল্লেখিত আসামীসহ অজ্ঞাত আরও ৭/৮ জন আসামী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাকে ঘিরে ধরে। এক নম্বর আসামী শুভ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথার পিছনে সজোরে আঘাত করলে মাথার পিছনের খুলি ভেঙে মারাত্মক জখম হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। দুই নম্বর আসামী গিয়াস লোহার হাতুড়ি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ফারুক মোল্যার বাম কাঁধের উপর আঘাত করতে থাকে। অন্য আসামীরা তাদের হাতে থাকা লোহার রড় দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত করে। ৯ ও ১০ নম্বর আসামী ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ফারুক মোল্যার ডান হাতের কনুইসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে। পরে ১১ নম্বর আসামীসহ সকল আসামীরাই তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে লোহার রড়, হাতুড়ি দিয়ে তার দুই পায়ের তালু থেকে কোমর পর্যন্ত আঘাত করে বিভিন্ন স্থানের হাড় চুর্ণ বিচুর্ণ করে ফেলে। ভিকটিমের চিৎকারে স্বাক্ষীরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে এক, দুই , তিন এবং দশ নম্বর আসামী তাদের কোমরে থাকা আগ্নেয়াস্থ দ্বারা ভীতি সৃষ্টি করার জন্য ফাঁকা গুলি করে। পরে ৮ ও ৯ নম্বর আসামী ফারুকের দুটি এনড্রয়েড মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। খবর পেয়ে স্ত্রী মাহাফুজা ও অন্যান্য স্বাক্ষীরা মৃতঃপ্রায় ফারুক মোল্যাকে ভ্যান যোগে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় ভিকটিম তার স্ত্রী মাহাফুজা ও কন্যা অন্তরাসহ অন্যান্য স্বাক্ষীদের কাছে ঘটনায় জড়িত আসামীদের নাম উল্লেখ করেন। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি এবং রক্ত প্রদান করা হয়। এরপর তাকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী এলাকায় পৌঁছালে ওই দিন রাত আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে মৃত্যু ঘটে। পরদিন লাশের ময়না তদন্ত শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
পরবর্তীতে এ ব্যাপারে ফুলতলা থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলার রেকর্ড না করে ঘুরাতে থাকে। শেষটায় উপায় অন্ত না পেয়ে খুলনার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফুলতলা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটিতে এফআইআর ভূক্ত করার জন্য ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিদের্শনা প্রদান করেন। ওসি মোঃ জিল্লাল হোসেন আদালতে মামলা দায়ের এর বিষয়টি অবগত হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, কপিটি এখনও হাতে পাওয়া যায়নি। হাতে পেলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এফআইআর ভূক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। থানায় মামলা গ্রহনের বিষয়টি গড়িমিশির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনায় প্রকৃত জড়িতদের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে বলায় বাদি আসেননি। অপরদিকে ঘটনায় প্রকৃতভাবে যাদের ইন্দনে ফারুক মোল্যাকে পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে তাদের নাম এজাহারে থাকায় থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ করেনি বলে বাদি মাহাফুজার অভিযোগ। ভিকটিম ও আসামীদের মোবাইল কল লিস্ট চেক করলে প্রকৃত খুনিদের নাম প্রকাশ পাবে বলে তার বিশ্বাস।