বিশেষ প্রতিনিধি: আজ ২৫তম সুন্দরবন দিবস। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হলো সুন্দরবন। নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে টিকে আছে এই সুন্দরবন। প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। তবে এই বিশাল ম্যানগ্রোভ বনটি নানান কারনে দিনদিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই ক্ষতির হাত থেকে সুন্দরবনকে বাচানোর দাবী সচেতন মহলের।
সুন্দরবনকে বলা হয় বাংলাদেশের ফুসফুস। এ বন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো ভয়ংকর সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনগণ ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবলয় হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুন্দরবন দেশের বনজসম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। আসবাবপত্র ও নিউজপ্রিন্ট, দিয়াশলাই, হার্ডবোর্ড ও নৌকা ইত্যাদি শিল্পের অনেক উপাদান সুন্দরবন থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া এ বনের মধু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। সুন্দরবনের গোলপাতা ঘরের ছাউনির কাজে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।
জানা যায়, সুন্দরবনের আয়তন সর্বমোট ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। তার মধ্যে ৬২ শতাংশ আমাদের বাংলাদেশে এবং বাকি ৩৮ শতাংশ পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত অপরূপ এ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ পরগণাজুড়ে বিস্তৃত। ১৯৯২ সালে এটি রামসার এলাকা ও ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এদিকে, বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পুরোটাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এর ৫৩ শতাংশ এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে সম্পদ আহরণ ও বনজীবীর প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে অসাধু মহলের দ্বারা সুন্দরবনের দিনদিন ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে, সুন্দরবন রক্ষা কেন্দ্রিক কোন নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে একের পর এক রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। রিসোর্টগুলোর আশপাশে শব্দ ও মাটিদূষণ বাড়ছে। ফলে সুন্দরবনের প্রাণীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সুন্দরবনকে রক্ষায় এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বনভূমিও বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবাধে চলছে হরিণ শিকার। যার দরুন হরিণের জীবন বৈচিত্রে এসেছে পরিবর্তন। কমে যাচ্ছে মূল্যবান এই প্রানী।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার অঞ্চলকে সংকটাপন্ন অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষতি করে এমন কোনো স্থাপনা নির্মাণ কিংবা কোনো কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ অবৈধ।সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইকবাল মাহমুদ বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করতে টেকসই উন্নয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের দাবি। এজন্যে দীর্ঘমেয়াদি ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ঘূর্ণিঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসের সময় পশু—প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উঁচু টিলা স্থাপন করা প্রয়োজন। এগুলোর জন্য সরকারের সদিচ্ছা থাকা জরুরি। একই সঙ্গে আমাদেরও পরিবেশ নিয়ে সচেতন হতে হবে। সরকার ও সাধারণ জনগণ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হব। তা হলে বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রকৃতি।