জামিনের পরও ইমামকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশঃ ২০২৪-০২-০৭ - ১৭:৫৬

উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনের পরও খুলনার দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরপর রাতভর থানায় নির্যাতন চালিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।

বুধবার বেলা সাড়ে বারোটায় খুলনা মহানগর বিএনপি কার্যালয় সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন বিএনপি’র আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম মনা বলেন, হাইকোর্ট থেকে সকল মামলায় আগাম জামিন নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন ইমাম হোসেন। সোমবার দিবাগত রাতে বাড়ির সামনে থেকে বিনা কারণে তাকে আটক করে দৌলতপুর থানা পুলিশ। এরপর তাকে গত ৬ জানুয়ারি রাতে দৌলতপুরের পাবলা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মশার কয়েল থেকে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আটক দেখিয়েছে। আটকের পর অমানসিক নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে হত্যার হুমকি দিয়ে পুলিশের শেখানো স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিতে বাধ্য করে গতকাল মঙ্গলবার তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।

তিনি বলেন, পাবলা দক্ষিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচন কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের কোন ঘটনাই ঘটেনি। ৭ জানুয়ারি বা ৮ জানুয়ারি কোন গণমাধ্যমে ওই ভোট কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনার কোন সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। শুধুমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানী করার জন্য এই ধরনের মিথ্যা অগ্নিসংযোগের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে এ মামলায় সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করে জাসাস মহানগর শাখার আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার নূর ইসলাম বাচ্চু ও বিএনপি নেতা মোঃ রিয়াজুল ইসলামকে সীমাহীন নির্যাতন করলেও পুলিশের শেখানো স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারতে পারেনি পারেনি।

তিনি অভিযোগ করেন, ইমামকে থানায় ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে।  সারারাত তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।  পুলিশের নির্যাতনে শেখ ইমাম হোসেন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে দৌলতপুর থানার পুলিশ তাকে হাসাপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। এরপর তিনি স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তাকে সিএমএম আদালতে হাজির করার আগে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে। আদালত চত্ত্বরে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। শেখ ইমাম হোসেন বিএনপির একজন পরীক্ষিত নেতা। দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময়ে সে রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করা ছাড়া অন্য কোন অভিযোগ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,  ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশের পর থেকে  আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে শারীরিকভাবে নির্যাতন  করা হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে মহানগর ও জেলা জেলা মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গায়েবী মামলা।  আসামী করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে। জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান অসুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার পথে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রায় সাড়ে তিন মাস যাবৎ কারাগারে আমীর এজাজ খান মানবেতর জীবনযাপন করছে। এজাজকে ঢাকার পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়াও হয়েছে। মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বাসায় না পেয়ে শশুর বাড়িতে পুলিশ ভাঙচুর করেছে। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। মহানগর  যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগরের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বৃদ্ধা মায়ের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ করা হয়েছে। মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ এর বাসায় পুলিশ বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীর সাথে চরম অসৌজন্যমুলক আচরণ করেছে। পুলিশ মিরাজের বাড়ির সকল সিসি টিভি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলেছে। যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদীকে না পেয়ে তার ভাইকে গ্রেফতার করেছে। খালিশপুর থানা বিএনপির সদস্য সািচব হবীব বিশ্বাস ও ছাত্রদলের সদস্য সচিব তাজিম বিশ্বাস বাড়িতে তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপি আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা, স. ম আ রহমান, সাইফুর রহমান মিন্টু, বেগম রেহেনা ঈসা, কাজী মাহমুদ আলী, বদরুল আনাম খান, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, আশরাফুল আলম খান নান্নু, একরামুল হক হেলাল, শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, এনামুল হক সজল, শেখ জাহিদুল ইসলাম, মো. মুরশিদ কামাল, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, মুর্শিদুর রহমান লিটন, নাসির খান, সরদার আব্দুল মালেক, মিজানুর রহমান মিলটন, শফিকুল ইসলাম শফি, সামছুল বারিক পান্না, এড. তছলিমা খাতুন ছন্দা, এ্যাড. কানিজ ফাতেমা আমিন, আজাদ আমিন, শরিফুল ইসলাম টিপু, রকিবুল ইসলাম মতি প্রমূখ।