খুলনা প্রতিনিধি: খুলনা নগরীর মুজগুন্নি এলাকায় সাধারন মানুষের যাতায়াতের রাস্তা দখলের অভিযোগ উঠেছে। নগরীর ১৪ নং ওয়ার্ডের মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার আনসার উদ্দিন বাইলেনের এবি লিংক রোডে ঘটনাটি ঘটেছে। এবি লিংক রোডের প্রায় পনেরোশত পরিবার বসবাস করেন। লিংক রোডটি দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এ রাস্তাটি ব্যতিত এলাকাবাসীর যাতায়াতের দ্বিতীয় কোন মাধ্যম নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, এবি লিংক রোডটি ব্যতিত অত্র এলাকায় প্রবেশের দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই। একটি মাত্র রাস্তার মাধ্যমে এলাকাবাসী যাতায়াত করছেন। অনেকে জমি ক্রয় করে বসতভিটা নির্মান করছেন। রাস্তা দখল হওয়াতে অনেক মানুষ নতুন করে বসতভিটা তৈরী করতেও ভয় পাচ্ছেন।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর ধরে এবি লিংক রোডটি ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা । অনেক মানুষ বসবাসের জন্য জমি ক্রয় করেছেন। কিন্তু রাস্তাটি দখলের কারনে তারা বসতবাড়ি নির্মান করতে পারছেন না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতির দায়ে আট বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি খুলনা—২ আসনের সাবেক এমপি মিজানুর রহমানের সহযোগি সিদ্দিকুর রহমান এবং মহিবুল্লা। মহিবুল্লা ছিলেন সাবেক এমপি মিজানের বডিগার্ড। সাবেক এমপি মিজানের কারাদন্ড হলেও তার লোকজন প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। এমনকি ক্ষমতার জোড়ে রাস্তাটি দখল করে বিক্রি করার চক্রান্ত করছেন সিদ্দিকুর রহমান ও মহিবুল্লা। সিদ্দিকুর রহমান ও মহিবুল্লাকে এলাকাবাসী বার বার অনুরোধ করলেও তারা না শুনে হুমকি দিচ্ছেন। গত ৫ই আগষ্টের পর আওয়ামলীগ সরকারের পতন হলে মহিবুল্লা এলাকা ছাড়া হলেও আবার এলাকায় ফিরেছেন। জমিজমার ব্যবসা একচেটিয়া ভাবে শুরু করেছেন। এমনকি এলাকার রাস্তাটি দখল করে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন।
আরো জানা যায়, সিদ্দিকুর রহমান ও মহিবুল্লার দৃশ্যমান কোন ব্যবসা বানিজ্য নেই। মহিবুল্লা ছিলেন এমপি মিজানের বডিগার্ড। বডিগার্ড থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম করেছেন। এমনিক আনসার উদ্দিন এলাকায় মাদ্রাসার জন্য দানকৃত জায়গা দখল করেও বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রওশান আরা বেগম বলেন, আমরা অনেক সাধারন মানুষ। এখানে পরিবার নিয়ে থাকি। প্রায় দুই যুগ ধরে আনসার উদ্দিন এলাকায় বসবাস করছি। আমরা এবি লিংক রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। এলাকার সকলে মিলে রাস্তাটি তৈরী করেছেন। এখন একটি কুচক্রী মহল রাস্তাটি দখল করে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা প্রভাবশালী বিধায় বার বার পাড় পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা এখন আতঙ্কে দিনযাপন করছি।
ফরহাদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, মানুষ এমন অমানবিক হলে যাতায়াতের রাস্তা দখল করতে পারে। এ এলাকায় আমরা প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করি। পনেরোশত পরিবার রয়েছে। একটি মাত্র যাতায়াতের রাস্তা। রাস্তাটি না থাকলে কেউ অসুস্থ হলে এম্বুলেন্স কিংবা আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ব্যবস্থাও থাকবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহমেদ বলেন, এই রাস্তা নিয়ে জটিলতা তৈরী হওয়ায় অনেক মানুষ ঘরবাড়ি নির্মান করতে পারছেন না। দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারন মানুষ প্রতিবাদ করতে ভয় পান। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে বলে এখন রুখে দাড়াতে হচ্ছে। নইলে পাঁচ হাজার মানুষ বিপদে পড়বেন।
সৈয়দ লিটন হোসেন বাবু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি। সাধারন মানুষরা রাস্তা দখলের প্রতিবাদ করলে হুমকির মধ্যে পড়তে হয়। আমরা নিরুপায় হয়ে রুখে দাড়িয়েছি। প্রতিবাদ করায় আমাকেও হুমকি ধামকি দিচ্ছে একটি মহল। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবো তবে আমরা এবার পিছু হাটবো না।
তবে এ বিষয়ে জানতে সিদ্দিকুর রহমান ও মহিবুল্লার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।