খুলনা : খুলনায় স্কুলছাত্র ফাহমিদ তানভীর রাজিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে চার কিশোর। এর মধ্যে রাজিনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করার কথা স্বীকার করেছে মো. মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বির হাওলাদার। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাব্বির খুলনা মহানগর হাকিম মো. শাহীদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এর আগে সোমবার বিকালে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারিন হাসান ওরফে রিজভী (১৩), আসিফ প্রান্ত আলিফ (১৬) ও মো. সানি ইসলাম ওরফে আপন (১৩)। তারা রাজিনকে কিলঘুষি মারার কথা শিকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে এজাহারের ১ নম্বর আসামি ফাহিম ইসলাম মনি এখনও গ্রেফতার হয়নি। এখন পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত সব কিশোরকে আদালতের নির্দেশে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিশপুর থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, জবানবন্দিতে চার কিশোরই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, এক সহপাঠীকে আলিফ প্রেম নিবেদনসহ উত্ত্যক্ত করতো। কিন্তু রাজিন বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। সে অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি রাতে পাবলিক কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে তাকে মারধর করা হয়। এ সময় রাজিনের বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় সাব্বির। আর অন্যরা তাকে কিলঘুষি মারে। ছুরির আঘাত গুরুতর হওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণেই রাজিনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, আসামি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বির হাওলাদার (১৭), বিএম মাজিব হাসান রয়েল (১৪) ও সাক্রান সালেহ মিতুলকে (১৪) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ আদালতে পাঠিয়ে দেয়। এর মধ্যে সাব্বির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। রয়েল ও মিতুল কোনও জবানবন্দি দেয়নি।
গ্রেফতারকৃত মঞ্জুরুল ইসলাম সাব্বির হাওলাদার নগরীর ছোট বয়রা শ্মশান ঘাট এলাকার জাকির হাওলাদারের ছেলে। বিএম মাজিব হাসান রয়েল নগরীর বয়রা সবুরের মোড় সেন্ট্রাল রোড এলাকার বিএম লিয়াকত আলীর ছেলে। আর মিতুল ছোট বয়রা ইসলামিয়া কলেজ রোড এলাকার ৭ নম্বর আনিস নগরের এসএম আব্দুল মজিদের সন্তান। এর মধ্যে র্যাব রয়েল ও মিতুলকে এবং পুলিশ বাকিদের গ্রেফতার করে। সাব্বিরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সোমবার বিকালে তার বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে পাবলিক কলেজে রাজিন হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর আলম সভাপতিত্ব করেন। পরে বেলা ১১টায় প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামে শোক সভা ও রাজিনের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভায় রাজিনের বিষয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন উপাধ্যক্ষ সেলিম হায়দার চৌধুরী, মলিন কুমার বসু, মো: শাহেদুল হক, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ মো: সিরাজুল ইসলাম, সহযোগি অধ্যাপক এস.এম আবু সায়িদ, ড. খান আলম উদ্দিন, সংকর প্রসাদ ঘোষ, এম.এ.বাসার, মোসা: আসমা খাতুন, প্রক্তন ছাত্র বিপ্লব, জগলুল কাদের, অভিভাবক মো: মমিনুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২০ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় খুলনা পাবলিক কলেজ ক্যাম্পাসে কনসার্ট চলাকালে ছুরিকাঘাতে ফাহমিদ তানভীর রাজিনকে হত্যা করা হয়। সে খুলনা পাবলিক কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় রাজিনের বাবা শেখ জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ২১ জানুয়ারি খালিশপুর থানায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।