খুলনা জেলা আ’লীগে অন্তঃদ্বন্দ্ব : তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ

প্রকাশঃ ২০১৮-০২-০২ - ২০:১২

খুলনা : দলে প্রভাব বিস্তার এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে। বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার নেতৃত্বাধীন দুটি পক্ষ। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দেখা গেল তার প্রমাণ। দু’গ্র“পের এমন কর্মকান্ডে হতাশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। পক্ষ বিবেচনার কারণে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ছে তৃণমূলেও। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতারা।
দলীয় সূত্র জানায়, খুলনা জেলা আউটার স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি। ওই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদকে সভাপতি ও সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজাকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি ৭১ সদস্যের খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয়। এ কমিটিতে প্রাধান্য পান সভাপতির অনুসারীরা। ৭১ সদস্যের মধ্যে ৪৮ জন সভাপতির অনুসারী এবং ২৩ জন সাধারণ সম্পাদকের গ্র“পের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর ক্ষুব্ধ হয় সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি উত্তাপ ছড়ায় দলের মধ্যে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্র“পের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আবারও প্রকাশ্যে চলে আসে।
গত ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় দলীয় কার্যালয়ে কার্যকরী কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে সভাটি পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী। সভায় আগামী ১০ ফেব্র“য়ারি কর্মীসভা ও ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন উপলক্ষে জনসভা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর সভাপতি ৭টি শূন্য পদে প্রস্তাবিত নাম ঘোষণা করলে তার বিরোধিতা করেন যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, ডাঃ বাহারুল আলম, অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল, রফিকুর রহমান রিপন, ডাঃ শহীদ উল্লাহ, এম এ রিয়াজ কচি, সদস্য ডাঃ মশিউর রহমান। তারা প্রস্তাব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি এবং সদস্য মৎস্যমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ’র উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসময় সভাস্থলে হট্টগোল শুরু হয়। দলের কয়েকজন নেতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কোন সিদ্ধান্ত না দিয়েই সভাপতি সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।
নতুন সাতটি পদের মধ্যে বর্তমান ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক অ্যাড. নিমাই চন্দ্র রায় ও দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. ফরিদ আহমেদকে সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামালকে যুগ্ম সম্পাদক, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. নব কুমার চক্রবর্তীকে সাংগঠনিক সম্পাদক, উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. শাহ আলমকে দপ্তর সম্পাদক, সদস্য অ্যাড. রবীন্দ্রনাথ মন্ডলকে আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং বদরুল আলম বাদশা, আমির আলী গাইন, শেখ মনিরুল ইসলাম, শেখ আবু জাফর ও মোস্তফা সরোয়ারকে নতুন সদস্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ দু’টি পরে নতুন সদস্যদের পূরণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অবর্তমানে অপর পক্ষ দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া। যার ফলে তার অবর্তমানেই ৭টি সদস্য অন্তভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ এর কাছে ৭টি শূন্য পদে কোঅপ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সভায় কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শুধু প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা মতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু জানান, নির্দিষ্ট একজনের স্বার্থে তড়িঘড়ি করে এই সাতটি পদ পূরণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়। এসময় অধিকাংশ নেতা এর বিরোধিতা করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে এধরনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।