দাকোপ,খুলনা : খুলনার দাকোপ উপজেলার জালিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক চিররঞ্জন সানা বার বার স্কুল ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক আচরণ ও ছাত্রদের লাঞ্চিত করার ঘটনায় জন রোষানলে পড়েছেন। অভিভাবক শিক্ষক হাতা-হাতিতে প্রধান শিক্ষক ও এক অভিভাবক আহত হয়ে হাসপাতালে।
সরেজমিনে জানা যায়, ক্লাশে অংক না পারার জন্য এক ছাত্রকে ক্লাশরুমে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বেঞ্চের উপর উলঙ্গ করে দাঁড়িয়ে দেওয়ার জের ধরে অভিভাবক এবং প্রধান শিক্ষকের সাথে হাতা-হাতি হয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী আনুমানিক সকাল ১০ টায় উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের জালিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিররঞ্জন সানা এবং লাঞ্চিত ছাত্রের জ্যাঠামশাই সুশান্ত ঢালী আহত হয়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে দাকোপ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং- ১০ তারিখঃ ১৪-০২-১৮।
মামলার অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষককে দেয়ালে সাথে আঘাত করে সোনালঙ্কার, নগদ টাকা নিয়ে যায়। তাছাড়া বদলির জন্য চাঁদাদাবী করেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
ঘটনার কারন জানতে জালিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকার অভিভাবকসহ শতাধীক গ্রামবাসী স্কুলবাড়ীতে হাজির হন। সেখানে আলাপ করে জানা যায় উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিররঞ্জন সানাকে তার নৈতীক অধপতনের কারণে পার জয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলি করে খেজুরিয়া বিনাপানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাটানো হয়। সেখানেও একই ধরণের ঘটনা ঘটানোর কারণে বদলি করে জালিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। আরও জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের নিকটে কোন রকম চাঁদাদাবীসহ সোনালঙ্কার, নগদ টাকা নেওয়া হয়নি বা তাঁকে দেয়ালের সাথে আঘাত করা হয়নি।
সাবেক ইউপি সদস্য বিদেশ রায় বলেন, উক্ত প্রধান শিক্ষক ২০১৫ সালে ৫ম শ্রেনীর ৩ জন ছাত্রীকে অফিসে ডেকে নিয়ে তাদের শরীরে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। অভিভাবকরা জানার পরে এলাকাবাসী উক্ত শিক্ষককে অফিসে অবরুদ্ধ করলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গনি, সাবেক উপজেলা প্রাঃ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রবসহ শিক্ষক নেতারা তাকে উদ্ধার করে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় তাঁরা এলাকাবাসীর আশ্বাস দেন শিক্ষকের প্রতি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
জানা গেছে, ঘটনাটির কোন সমাধান না পেয়ে ১৯ জুন ২০১৬ উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিভাবকরা আবেদন করেন। তাতেও কোন ফল না হলে পরে উপ-পরিচালক শিক্ষা খুলনা বরাবরে আবেদন করেন এলাকাবাসী। নির্দেশে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে স্কুল পরিদর্শন করেন এবং অভিযোগকারীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ সংগ্রহ করে চলে যান। এরপর উপ-পরিচালক চাকুরী থেকে অবসরে যান। এরপর দীর্ঘদিন কোন বিচার না পেয়ে পূনরায় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেণ এলাকাবাসী। এ বিষয়ে তবুও কোন সমাধান পায়নি আবেদনকারীরা।
সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র রায়, প্রাক্তন সভাপতি কমলেশ রায়, স্কুলের ভূমীদাতা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরবিন্দ রায়, অভিভাবক খুকুমনি ঢালী, সুচিত্রা সরদার জানান, ২০১৭ সালের নভেম্বরের চতুর্থ শ্রেনীর এক ছাত্রকে অংক না পারার কারণে উলঙ্গ করে ক্লাসে সবার সামনে হাই বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সে ঘটনার পর লজ্জায় উক্ত ছাত্র ১মাস স্কুলে না গিয়ে স্কুল টাইমে অন্যত্র লুকিয়ে থাকে পরে অভিভাবকরা বিষয়টি জানতে পারেন। জানুয়ারী-২০১৮ প্রধান শিক্ষক চিররঞ্জন পূনরায় অফিস রুমে ডেকে পঞ্চম শ্রেনীর এক ছাত্রীর দিকে কু- ইঙ্গিত করলে তার বান্ধবীরা দেখে ফেলে এবং বিষয়টি অন্য শিক্ষকদের জানায়।
একটার পর একটা অপকর্ম করে যাচ্ছে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা দপ্তরে বার বার আবেদন করেও এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না বলে সরাসরি প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে গিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। এরপর প্রধান শিক্ষক নিজেকে দোষমুক্ত করার জন্য এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁরা বলেন, চরিত্রহীন প্রধান শিক্ষকের স্কুলে আমরা আমাদের শিশু কন্যাদের পড়তে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি।
এক ছাত্রীর মা সুচিত্রা ঢালী অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক শুধু ছাত্রীদের সাথে নয় সুযোগ পেলে ছাত্রীর মা-দের সাথেও কুরুচিপূর্ন আলাপ করে। সহকারী শিক্ষিকারাও তার ভয়ে থাকে। প্রধান শিক্ষক বুকে হাত চড় মেরে বলে“আমি চিররঞ্জন সানা, আমার চাকুরী কেউ নষ্ট করতে পারে না, আমাকে বদলি করার ক্ষমতা কারো নেই।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সহকারী শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ রায় বলেন, এসব আমরা জানি তবে আমরা নীচে চাকুরী করি তাই হেড স্যারকে কিছু বলতে পারি না।
মুঠোফোনে কথা হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ পোদ্দার সাথে। তিনি জানান, উক্ত শিক্ষকের অভিযোগ আমি তদন্ত করেছি, তার স্বভাব চরিত্র ভাল নয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট উপ-পরিচালকের বরাবর পাঠিয়ে দেব।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গৌরপদ বাছাড় বলেন, স্কুলটি আমার এলাকায় আমি উক্ত প্রধান শিক্ষকের সব ঘটনা শুনেছি। এমন চরিত্রহীন শিক্ষককে চাকুরীতে রাখা উচিৎ নয়। বিশেষ করে শিক্ষকতায়।
প্রধান শিক্ষক মিথ্যে মামলা করার পর ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে এবং উক্ত শিক্ষকের বদলির দাবিতে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের আশুদৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।