আহমেদ ফরিদ, রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে শিবির সন্দেহে ১২ শিক্ষার্থীকে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এসময় ১২ শিক্ষার্থীকে আটক করে বেধড়ক পিটিয়ে ভোর ৪টার দিকে আহত অবস্থায় তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটককৃতরা পুলিশের তত্বাবধানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
আটককৃতরা হলেন- শিবিরের রাবি শাখার সাহিত্য সম্পাদক নাবিউল ইসলাম (আরবি, মাস্টার্স), শিবিরের সাথী সাহারুল আলম হিমেল (পরিসংখ্যান, চতুর্থ বর্ষ), ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সভাপতি সাহেব রানা (আইসিই, তৃতীয় বর্ষ), জোহা হলের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন (ইসলামের ইতিহাস, তৃতীয় বর্ষ), শিবির কর্মী আশিকুল হাসান নাফিস (নৃবিজ্ঞান, চতুর্থ বর্ষ), আরিফুল ইসলাম (ফার্সি, মাস্টার্স), রাকিব আহমেদ (আইন, দ্বিতীয় বর্ষ), মাহমুদুল হাসান (উদ্ভিদবিজ্ঞান, চতুর্থ বর্ষ), শরীফুল ইসলাম (পরিসংখ্যান, চতুর্থ বর্ষ), আব্দুর রাকিব (ইসলামিক স্টাডিজ, তৃতীয় বর্ষ), অলিউল (আরবি, মাস্টার্স) এবং গোলাম রাব্বানি (আরবি, দ্বিতীয়)।
হল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হল থেকে শিবিরের রাবি শাখার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নাবিউল ইসলাম এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সভাপতি সাহেব রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে হলের ১৫০, ১৫৫, ২৫৪, ২৭৬ ও ৩৫৮ নম্বর কক্ষ থেকে শিবির নেতা জাকির হোসেন, সাহারুল আলম, শিবির কর্মী আশিকুল হাসান, আরিফুল ইসলাম, রাকিব আহমেদ, মাহমুদুল হাসান, শরীফুল ইসলাম, আব্দুর রাকিব, অলিউল ও গোলাম রাব্বানিকে ধরে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এসময় আটককৃতদের কক্ষ থেকে দুইটি কম্পিউটার, শিবিরের রিপোর্ট ও জিহাদী বইসহ বিপুল পরিমান সাংগঠনিক কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। কম্পিউটারে শিবিরের গোপন পরিকল্পনার তথ্য আছে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে ছাত্রলীগের এই অভিযান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কোন সদস্য কিংবা হল প্রশাসনের কোন কর্মকর্তাই উপস্থিত ছিলেন না। পরে শিবির নেতাকর্মীদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে শিবির নেতাকর্মীদের পুলিশে দেয়ার পর রাত ৪টার দিকে হলে এবং ক্যাম্পাসে শিবিরবিরোধী মিছিল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৪৮ নম্বর কক্ষ থেকে শিবির নেতা নাবিউল এবং ১৪৩ নম্বর কক্ষ থেকে সাহেব রানাকে আটক করি। পরে হলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে আরও ১০ জনকে আটক করি। ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি এবং নাশকতার উদ্দেশ্যে তারা হলে অবস্থান করছিল। তাদের সবাইকে পুলিশে সোপর্দ করেছি।
জানতে চাইলে মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি, তদন্ত) মাহবুব আলম বলেন, ছাত্রলীগ অভিযান চালানোর সময় আমরা হলে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু হল প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় আমরা অভিযানে অংশ নিতে পারিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের কক্ষ থেকে কম্পিউটার, আটককৃতদের মুঠোফোন, রিপোর্ট বই এবং জিহাদী বইসহ সাংগঠনিক কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে থানায় আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানান থানার এই কর্মকর্তা।