ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি : সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ডুমুরিয়ার মাগুরখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কার্তিক মন্ডলের পরিবারে কান্না থামছে না। কেউ শান্ত¦না দিযেও তাদের স্বাভাবিক করতে পারছেন না। কার্তিকের বাবা নির্মল কান্তি মন্ডল নিজেকে প্রবোধ দিতে পারছেন না। এক সময়ে যে ছেলে নিজের সংসারের অভাব কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে সেই ছেলে আর তাকে বাবা বলে ডাকবে না। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আমি নিজেই শান্ত¦ হতে পারছি না সেখানে মাসুম দুটি সন্তানের কান্না কিভাবে থামাব।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরে মাগুরখালি ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে কার্তিক চন্দ্র মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় জনাতিরিশেক বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ। সবাই বিষন্ন মুখে বসে আছেন। এমন সময়ে সেখানে প্রবেশ করি। সাথে ছিলেন কার্তিকের মামা সুকুমার মন্ডল, দীর্ঘদিনের সাথী মন্জো সরকার, মৃনাল কান্তি মন্ডল সহ আরো অনেকে। এমন সময়ে কার্তিকের বাবা নির্মল কান্তি মন্ডল অশ্রুভেজা চোখে বসেছিলেন। তার কাছে গিয়ে দাড়ালে তিনি মুখের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। তিনি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন এক সমযে আমার কিছুই ছিল না। আমার বাবা (কার্তিক) লেখাপড়া করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের কাজ করে সংসারের অভাব ঘুচিয়েছে। সে মানুষের বিপদে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের পাশে ছুটে গেছে। দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা করিয়েছে। কিন্তু বাসের ধাক্কায় নিজেই চলে গেল। চিকিৎসা নিতে পারল না। আমি এ ব্যথা কি করে ভুলব। কার্তিক আমার ছেলে ছিল না। কার্তিক ছিল আমার বাবা।
সাবেক চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র মন্ডলের সব সময় পাশে থাকা মনোজ সরকার বলেন, আমরা একজন অভিভাবক হারালাম। অসহায় হয়ে গেলাম। বিপদে আপদে যে মানুষটি আমাদেরকে ছায়ার মত আশ্রয় দিত সেই মানুষটি আমাদের মাঝে আর নেই এটা ভাবতেই মন ডুকড়ে উঠছে।
কার্তিকের অত্যন্ত আস্থাভাজন কর্মী মৃণাল কান্তি মন্ডল আর আমাকে ডেকে বলবে না, মামা একটু মাদারতলা বাজারে আস কাজ আছে।
কার্তিকের মামা সুকুমার বিশ্বাস বলেন, সে আমার ভাগ্নে হলেও আমারা ছিলাম বন্ধুর মত। যে মানুষটি তিলে তিলে নিজেকে জনপ্রিয় হযে গড়ে তুলেছিল সেই মানুষটি আজ আমাদের পাশে নেই। মাগুরখালি ইউনিয়নের মানুষের অতি প্রিয় মানুষ ছিল কার্তিক। এবার সে চেয়ারম্যান হতে পারেনি। কিন্তু এলাকার মানুষের সমস্যা দুর করতে মানুষের পাশে ছুটে গেছে।
মাগুরখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শোকাহত কার্তিক চন্দ্র মন্ডলের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে আসেন পার্শ্ববতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত কুমার বৈদ্য। তিািন বলেন, অত্যন্ত সদালাপী, বিনয়ী আপদমস্তক জনপ্রিয় এক যুবককে আমরা অকালে হারালাম। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে অনেক সাধনার পর একজন কার্তিক তৈরি হয়। অথচ একজন অদক্ষ চালকের উদাসীনতায় সেই কার্তিককে আমরা হারালাম।
গত রোববার সকালে মাগুরা জেলা সদরে মোটর সাইকেলের সাথে বাসের সংঘর্ষে মাগুরখালী ইইনয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র মন্ডল মারা যান। কার্তিক ১ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। মেয়ে ঝুথিকা রানী মন্ডল বাগেরহাট পিসি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষযের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছেলে কল্লোল কুমার মন্ডল পল্লী শ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নিয়েছে।