কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : মিল শ্রমিক এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকায় বসাবসকারী মানুষের কফ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যক্ষ্মা রোগীদের সন্ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা ও শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। নগরীর মীরেরডাঙ্গা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এক বছরে ৩৪৯ যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্রার (এমডিআর) রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯৪ জন। মারা গেছেন ৪ জন। অপরদিকে সিভিল সার্জনের সহযোগিতায় জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ধানঝুরি কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প পিমে সিস্টার্স পরিচালিত বিনামূল্য ক্লিনিকে গত এক বছরে ২৬৩ জন যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন এমডিআর রোগী আছে।
আজ ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সিভিল সার্জনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য “নেতৃত্ব চাই যক্ষ্মা নির্মূলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে”। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উদ্্যাপনের জন্য বিভাগ, জেলা এবং উপজেলায় পর্যায়ে র্যালি, আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
মীরেরডাঙ্গা ১০০ শয্য বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ উদয় বরন ম-ল বলেন, ওষুধের কোন ঘাটতি নেই। জনবল সঙ্কট রয়েছে। যাদের এমডিআর রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হচ্ছে তাদের জন্য আলাদা বেডের ব্যবস্থা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১২ থেকে ৫০ বছর ঊর্ধ্বের বয়সী নারী-পুরুষ বেশির ভাগই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর পেছনে ৩ কারণ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে অপুষ্টি, পরিবারের একজনের শরীর থেকে অপরজনের শরীরে জীবাণু ছড়ানো এবং শিল্প অঞ্চলে এই রোগের জীবাণুর সক্রিয় অবস্থান থাকা।
নগরীর বড় বয়রা দাসপাড়া এলাকায় অবস্থিত পিমে সিস্টার্স নামক ৩৩ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কো-অর্ডিনেটর মোঃ আকতার হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে তাদের হাসপাতাল ও নগরীর ১৯টি ওয়ার্ডে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত কার্যক্রম পয়েন্টগুলোতে ২৬৩ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়। এছাড়া চলতি বছরের গত ১৯ মার্চ পর্যন্ত আরও ৮০ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত অনেকে এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন এমডিআর রোগী আছে। ওই সব রোগীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে ৭ জন মারা গেছেন।
পিমে সিস্টার্স এর প্রজেক্ট অ্যান্ড মেডিকেল ডাইরেক্টর রোবার্তা পিনোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, মিল শ্রমিক এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকায় বসাবসকারী মানুষের কফ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান িেবশ পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় পরিবারের কাছ থেকে অবহেলার শিকার হন। এটা মোটেই কাম্য নয়। এই সব রোগ সম্পর্ক একটু সচেতন হলে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মুখে মাস্ক প্রতিটি মানুষের জন্য ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে জীবাণু শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশের সম্ভাবনা কম থাকে।
ওই হাসপাতালের যক্ষ্মা রোগী জিন্নার আলী, তিনি পেশায় একজন দোকানদার। নগরীর খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা। গত ৩ মাস আগে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, কাশি সর্দি ও জ্বর প্রায় সময়ই থাকতো। প্রথমে কফ লাল হাসপাতালে পরীক্ষা করানো হলো আমার যক্ষ্মা শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিচ্ছি। অপর রোগী মোঃ আলমগীর হোসেন। তিনি ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। তার এ রোগ শনাক্ত হওয়ার পর খুলনায় চলে আসেন। তিনি নগরীর সোনাডাঙ্গা আইজের মোড় এলাকার বাসিন্দা।
হাসপাতালের কো-অর্ডিনেটর মোঃ আকতার হোসেন বলেন, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে ওই দিন নগরীর হাদিস পার্ক হতে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি র্যালি বের করা হবে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে গণসচেতনতামূলক ও প্রতিরোধের বিষয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, জেলার ৯ উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্র্যাক যক্ষ্মা আক্রান্তদের চিকিৎসা সুবিধা দিচ্ছে। এছাড়া মহানগরী এলাকায় এফএফ, পিকেএস এবং পিমে সিস্টার্স নামক এনজিও এই রোগে আক্রান্তদের সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছে। ওষুধের কোন ঘাটতি নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান। তথ্য মতে, অপুষ্টি, ছোঁয়াচে এবং ইথারে ইথারে জীবাণু ভেসে বেড়ানোর কারণে যক্ষ্মা রোগের বিস্তার বাড়ছে। তাছাড়া বয়োবৃদ্ধজনিত কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসায় যক্ষ্মা জীবাণু সহজে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। মহানগরীর ৯টি স্থানে মাইক্রোস্কপি পরীক্ষা করা হয়।
উল্লেখ্য, নগরীর বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে আক্রান্ত ব্যক্তির কফ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্রার (এমডিআর) রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ জন এবং ২০১৭ সালে ১৫ মার্চ পর্যন্ত এ রোগীর সংখ্যা পাওয়া যায় ৪ জন। এছাড়া মীরেরডাঙ্গা বক্ষধ্যাধি হাসপাতালে গত ৪ বছরে (২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত) মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্রার (এমডিআর) রোগীদের ১৭৯ জনের মধ্যে ৩৫ জন মারা যায়। অন্যদিকে গত এক বছরে ৯ উপজেলায় ১৮২৮ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে মারা যায় ২১ জন।
বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মধ্যে একটিমাত্র বক্ষব্যাধি হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীদের চাপ রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্রার (এমডিআর) রোগীদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা মিলে ৩৪ থেকে ৩৫ জন মারা গেছে। ওই সময়ের মধ্যে এমডিআর ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭৯ জনের মতো। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬ জন। এর মধ্যে ১ জন মহিলা ও ৫ জন পুরুষ রেেয়ছে। ২০১৭ জানুয়ারি মাসে যশোর জেলার ঝিকরগাছা এলাকার বাসিন্দা ৩০ বয়সী এক মহিলা মারা যান।