খুমেক হাসপাতালের অধিকাংশ ওয়ার্ডের বেহাল অবস্থা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-২৮ - ১০:৪১

কামরুল হোসেন মনি: খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-১, সার্জারি অর্থোপেডিক্স, সার্জারি-২ ও শিশু বিভাগের কয়েকটটি ফ্যান নষ্ট হয়ে আছে। অনেক ওয়ার্ডে আবার বৈদ্যুতিক বোর্ডের টু-পিন নষ্ট থাকে। এ কারণে বাসা থেকে ফ্যান এনেও লাভ হচ্ছে না। গরমে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া ওয়ার্ডের বাথরুমগুলো অপরিচ্ছন্ন, কল নষ্ট, উৎকট গন্ধে রোগীরা থাকেন অস্বস্তিতে। নাকে কাপড় দিয়ে কোনরকম নিঃশ্বাস ফেলছেন।
রোববার খুমেক হাসপাতালের কয়েকটি গুরুত্বরূর্ণ ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য উঠে আসে। দিনকে দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিনের ব্যবধানে গতকাল ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়াবিদ জানান, বর্তমানে তাপমাত্রা পারদের মতো ওঠানামা করছে।
অপরদিকে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করার কারণে প্রত্যেক ওয়ার্ডে বাথরুমে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন থাকে। তাকে ওয়ার্ড ইনচার্জরা মোবাইল করলেও তিনি সহজে রিসিভ করেন না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বৈদ্যুতিক লাইন ও নষ্ট ফ্যানগুলো ঠিক করার জন্য পিডাব্লিউডিকে অবহিত করা হয়েছে। তারা সময়মতো এসে ঠিক না করলে আমাদের করার কিছু নেই।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, হাসপাতালে ফ্যান নষ্ট, লাইট নষ্ট এ সবই পিডাব্লিউডি দেখভাল করেন। বিষয়টি আমরা পিডাব্লিউডিকে অবহিত করেছি। রোগীরা কষ্ট পাচ্ছে, আমরাও বুঝি। তবে এতে আমাদের কি করার আছে, ওরাই তো সব ঠিক করে দিয়ে যাবে।
গণপূর্ত বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ রেজাউল করিম জানান, এ বিষয়ে হাসপাতালের সুপার আমাকে অবহিত করেছেন। আমি সংশ্লিষ্টকে জানিয়ে দিয়েছি উল্লেখ করে বলেন, আমি সিভিলে দায়িত্বে আছি।
রোববার সরেজমিন খুমেক হাসপাতালের মিডিসিন ইউনিট-১ এর ৫-৬ ওয়ার্ডে গেলে অ্যাজমা রোগী মোঃ বেলাল হোসেনের সাথে কথা হয়। তিনি ওই ওয়ার্ডে বেড-২ এ শনিবার ভর্তি হন। তার মাথার ওপর ফ্যান নষ্ট। বাসা থেকে ফ্যান এনে বাতাস নেওয়ার লাইন নেই, ইলেক্ট্রিক বোর্ডের টু-পিনও নষ্ট। আত্মীয়রা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। গরমে রাতেও ঘুমাতে পারেননি। সার্জারি অর্থোপেডিক্স বিভাগ-১-২ গেলে সেখানেও দুইটি ফ্যান দুইটি ফ্যানই নষ্ট। কথা হয় ওই ওয়ার্ডের রোগী মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি পেশায় একটি মিলে কাজ করতেন। অসাবধনতাবশত মেশিনের মধ্যে হাত ঢুকে গেলে তার হাতের কব্জি কেটে পড়ে যায়। ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা তিনি। অপর রোগী সুমিল কুমার ম-ল। গত ৫ দিন ধরে হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আছেন। ফ্যান নষ্ট থাকায় গরমে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সার্জারি ইউনিট-২ এর ১১-১২ ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স রঞ্জিতা সরকার বলেন, তার ওয়ার্ডে দুইটি ফ্যান দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। রোগীরা এই গরমে খুব কষ্ট ভোগ করছে। বাথরুমের কল, বেসিন নষ্ট হয়ে গেছে বহুদিন ধরে। তার ওয়ার্ডে ধোপা (কাপড় কাচা লোক) এক মাস ধরে খোঁজ নেই। বেডের বিছানা পরিষ্কার করতে না পারায় রোগীদের দেওয়া হচ্ছে না। তারা বাসা থেকে এনে বেডে বিছানার কাপড় ব্যবহার করছেন।
বার্ন ইউনিটে তাওহিদ। বয়স ১৫ মাস। গত এক মাস ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জন্মের সময় পায়খানার রাস্তা না থাকায় অপারেশন করা হয় তাকে। তার মা তানিয়া জানান, ফ্যান নষ্ট থাকায় তার শিশু পুত্র গরমে ছটফট করে। রাতে বেশি বিরক্ত করে। লাইটও নষ্ট। তেলাপোকা ঘুর ঘুর করে। বাথরুমগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতাউর রহমানের ওই সব দেখভাল করার দায়িত্ব। কোথায় সমস্যা, কোথায় কি দরকার। কিন্তু তিনি কোন খোঁজ খবর রাখেন না। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইনচার্জরা তাকে মোবাইলফোন দিলেও তিনি সহজে রিসিভ করেন না। হাসপাতালের সুপার কোন ওয়ার্ডবয় বা ফ্রি সার্ভিসকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে ওই ওয়ার্ড মাস্টার অভিযুক্তের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে সুপারের কাছে তার জন্য সুপারিশ বা তদবিরের জন্য ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ডিউটি বন্টনের জন্য মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, খুলনাঞ্চলের বর্তমানে তাপমাত্রা পারদের মতো ওঠা-নামা করছে। তবে গত একদিনের ব্যবধানে তাপমাপাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলিসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। তার দেওয়া তথ্য মতে, গত ২২ মার্চ খুলনায় তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস, সর্বনি¤œ ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেঃ সিঃ, ২৩ মার্চ ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেঃ সিঃ সর্বনি¤œ ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলিসিয়াস, ২৪ মার্চ তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেঃ সিঃ ও সর্বনি¤œ ছিল ২৪ দশমিক এবং ২৫ মার্চ রোববার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ছিল ৩৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেঃ সিঃ ও সর্বনি¤œ ছিল ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেঃ সিঃ। এই হিসেবে গত একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেঃ সিঃ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়াবিদ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।