ইমতিয়াজ উদ্দিন, কয়রা থেকে: আইলাদুর্গত কয়রা উপজেলার অসহায় মানুষের কান্না যেন থামছে না। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপজেলাবাসি একরকম যুদ্ধ তরে টিকে আছেন। এইসব দুর্যোগের রেশ কাটতে না কাটতেই মানবসৃষ্ট চিংড়ি ঘেরের দুর্যোগের কারনে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দিনকেদিন বেড়েই চলেছে। যে রাস্তা তৈরী করা হয়েছিল উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, জমি উদ্ধার, নোনা পানি প্রবেশ রোধের পাশাপাশি বন্যানিয়ন্ত্রণের জন্য সেই বাধের রাস্তা সিদ্র করে নোনা পানি প্রবেশের মহা ঊৎসবে পরিনত করেছে এলাকার প্রভাবশালী ঘের মালিকরা। উপকূলীয় জনপদ কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩-১৪/১ ও ১৩-১৪/২ পোল্ডারে বেড়িবাঁধের শতাধিক স্থানে ছিদ্র করে বাঁধের তলদেশে পাইপ ঢুকিয়ে নোনা পানি ঢুকানোর কারণে একদিকে ওয়াপদা বাঁধ যেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং ব্যাপক চিংড়িচাষের কারণে মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে ফলদ ও বনজ গাছপালা মরে যাচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে এলাকার দরিদ্র ও প্রান্তিক আয়ের অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। হাজার হাজার হেক্টর আবাদী জমি যা চাষীদের বেঁচে থাকার অবলম্বন তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। লবনাক্ত এলাকায় সবুজের চিহ্ন নেই, মানবসৃষ্ট দুর্যোগে এ অঞ্চলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে কৃষি ও বনভূমিতে জোরপূর্বক নোনা পানি তুলে চিংড়িচাষ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি তোলার জন্য বেড়িবাঁধের সর্বনাশ করেই চলেছে ঘেরমালিকরা। কয়রা উপজেলার দক্ষিন বেদকাশি, গোলখালি, আংটিহারা উত্তর বেদকাশির হরিহরপুর, কাটকাটা, গাববুনি, গাজীপাড়া, কাশিরহাট, কয়রা সদরের হরিনখোলা-ঘাটাখালি, গোবরা, ৬নং কয়রা, মহারাজপুরের দশালিয়া, মঠবাড়ি, মহেশ্বরীপুরের কালিবাড়ি, শিকারিবাড়ির ইত্যাদি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে পাইপ বসানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সব এলাকার অর্ধশত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ারও উপক্রম। পাউবো কর্মকর্তারা অবশেষে জনপদগুলো রক্ষার জন্য মূল ক্লোজারের কাজ বন্ধ রেখে অনেক স্থানে রিং বাঁধ তৈরি করে জনপদগুলো রক্ষা করেছে। ফলে বহু জায়গা জমি ওয়াপদার বাইরে চলে গেছে। নদীর পানিতে গ্রাস করেছে বহু গ্রাম। ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের অবৈধ বোরিং ও নাইনটি পাইপ এর ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙনের কারণে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক। ইতমধ্যে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অবৈধ পাইপ অপসারনের জন্য মাইকিং করা হয়েছে । এরপরেও যারা বাঁধ ছিদ্র করে ঘের ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোঃ সেলিম আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ভেড়িবাঁধে বোরিং ও নাইনটি পাইপ মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করছি, শীঘ্র তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।