গোলাম মোস্তফা খান, দাকোপ : পার্চিং হচ্ছে ফসলি জমিতে লম্বা খুঁটি বা বাঁশ পুঁতে রাখা, যাতে এসব খুঁটিতে সহজে পাখি এসে বসতে পারে। এতে ফসলের ক্ষতিকর পোকার মথ বা কীড়া খাইতে পাখির সুবিধা হয় এবং তার সাথে জৈবিকভাবে পোকা দমন হয়ে যায়। ফলে বালাইনাশক ব্যবহার করা লাগেনা। এ পদ্ধতিতে পরিবেশের ভারসাম্যের কোন ক্ষতি না। এভাবে ধানের জমিতে স্থাপন করা খুঁটি বা বাঁশ দিয়ে পাখির বসার সু-ব্যবস্থা করে দেওয়াই হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি।
পার্চিং পদ্ধতি বোরো ধান খেতের পোকা দমনের মধ্য দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে খুলনার দাকোপ উপজেলার কৃষকদের কাছে।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার সুতারখালী, কৈলাশগঞ্জ, কামারখোলা ও বাজুয়া গ্রামের কয়েকটি ধানখেত ঘুরে দেখা গেছে, অনেকের খেতের মাঝে কিছু দূরে-দূরে বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল পুঁতে রাখা। কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, ধানের ক্ষতিকর পোকা দমনে বিশেষ করে মাজরা পোকা দমনে নির্দিষ্ট ব্যবধানে কঞ্চি পুঁতে রেখেছি। এতে খুবই উপকার হচ্ছে। এসব ডালে ফিঙে এসে বসে। আর পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে ধরে খাচ্ছে। ধান খেতে তেমন কোন কীটনাশক ব্যবহার করা লাগচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, প্রতিবছর বোরো আবাদে জমির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে কৃষকদের পার্চিং পদ্ধতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে পার্চিং করা হয়েছিল ১২ হেক্টর জমিতে। সুত্রে আরও জানা যায়, এবছর ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯শতাংশ জমিতে পার্চিং করা হয়েছে।
উপজেলার লাউডোব গ্রামের সফল চাষী ও আ’লীগ নেতা শেখ যুবরাজ এবার ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তিনি সম্পূর্ণ খেতে পার্চিং করেছেন। তিনি বলেন, ১৫ বিঘা ধানখেতে ৪৮টি ডাল ও ৪২টি কঞ্চি পুঁতে দিয়েছি। এতে ফিঙে ও শালিক পাখি এসে বসে এবং ক্ষতিকর পোকা ধরে খেয়ে ফেলছে। এ পদ্ধতি ভালো কাজ হচ্ছে।
উপজেলার পশ্চিম বাজুয়া গ্রামের কৃষক ফনিভূষণ মন্ডল বলেন, এবছর ধানের ধান ভালো হওয়ায় ১৫ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শের নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ ধানখেতে পার্চিং করেছি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এসএম এনামুল ইসলাম বলেন, খেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে এটা প্রাকৃতিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতির নাম পার্চিং। যা পাখি বসার জন্য দাঁড়। এ পদ্ধতিতে খেতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল পুঁতে দিতে হয়। এই পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকার মধ্যে মাজরা পোকা দমনে বেশ উপকর। বোরো ধান রোপণের ২০দিনের মধ্যে ধান খেতে পার্চিং করতে হয়। এটি ১ বিঘা জমিতে ১০টি বাঁশের আগা, কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁততে হয়।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১৮ জন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানায়, পার্চিং পদ্ধতিতে বোরো খেতের ক্ষতিকর পোকা দমন হচ্ছে। তাছাড়া বাড়তি খরচ আর কীটনাশকের ব্যবহার না থাকায় দিন দিন এ পদ্ধতি আমাদের অঞ্চলে জনপ্রিয় পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, পার্চিং পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করার জন্য বেশ ভালো কার্যকারী। মাজরা পোকা দমনে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না। এছাড়া কৃষকদের বাড়তি খরচ হয় না। উৎপাদন ব্যয়ও কম হয়। তাছাড়া এ পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব। তাই বোরো ধানখেতে বাঁশের আগা, কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে কৃষকেরা পার্চিং করতে আগ্রহী হয়েছে।