বেড স্বল্পতায় রোগীদের ঠাঁই মেঝেতে
গত ২৯ দিনে শিশুসহ ৯৯ জন রোগী ভর্তি, শিশুসহ মৃত্যু ৫
কামরুল হোসেন মনি : শিশু কন্যা সানজিদা। বয়স সাড়ে ৩ বছর। গত ২৯ দিন ধরে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি রয়েছে। মেঝেতে তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়েটির সারা শরীর ঝলসে যায়। মেয়েটির মা রাবেয়া খাতুন বলেন, মেয়েটি গরমে ছটফট করে। সিট না থাকায় ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
অপর রোগী কালাম মুন্সী। গত দুইদিন আগে নিরালায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তার চোখ-মুখ ও বুক ঝলসে যায়। হাসপাতালে বেড না থাকায় তাকে মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কালামের খালাতো বোন চায়না বেগম বৃহস্পতিবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, শুধু গ্যাসের ট্যাবলেট ছাড়া তেমন ওষুধ পায়নি। প্রায় ওষুধই বাইরে থেকে নিয়ে আসা লাগে। প্রতিদিন ৪ হাজার টাকার ওপরে ওর চিকিৎসার পেছনে খরচ হচ্ছে। দিনমজুরের পরিবার তার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। শুধু এরাই নয়, খুমেক হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটে দিনকে দিন রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া, গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে ঝলসে যাওয়া রোগীরা এখানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। গত ২৯ দিনের শিশুসহ ৯৯ জন রোগীকে এই ইউনিটে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশুসহ ৫ জন মারা যায়। ওই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৩ জনের বেশি রোগী নতুন করে ভর্তি হচ্ছে। মাত্র ২৮ বেডের মধ্যে পুরুষ ১৪টি, মহিলা ৬টি ও শিশু সার্জারিতে ৮টি বেড রয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, খাতা-কলমে রয়েছে ৫০০ বেড। দিনকে দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালের জনবল সেই অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়নি। ২৫০ বেডে থাকা অবস্থায় জনবল পূরণ হয়নি; ৫০০ বেডের কথাই বাদ দিলাম। এর মধ্যে আবার কেউ বদলি হয়ে গেছে, কেউ বা মারা গেছে আবার কেউ বা অবসরে চলে গেছেন। অল্প সংখ্যক জনবল ও চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সূত্র মতে, গত ১ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত বার্ন ও শিশু সার্জারি মিলে শিশুসহ মোট ৯৯ জনকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ১৮ জন। এই সময়ের মধ্যে ৫ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৩ জন। যাদের বয়স ২ থেকে সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ ফরিদ উদ্দীন বৃহস্পতিবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, এই সময়ে আগুনে পোড়া, গ্যাস বিস্ফোরণ, গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড স্বল্পতার কারণে রোগীদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ৬৫৩ জন পোড়া রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ২২ জন। আর ৫১ জন ঢাকা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে রেফার্ড করা হয়। এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪৫৪ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মারা গেছে ১১ জন। ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে ৩ জনকে।