মেহেদী হাসান : বাংলা নববর্ষের বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের বাঙালি জীবনের একটি জাতীয় লোকজ ঐতিহ্য। গ্রামের মানুষের আনন্দ-উল্লাস এবং চিত্ত বিনোদনের অন্যতম বাহন। বাংলাদেশ উৎসবমুখর দেশ। উৎসবগুলোর মধ্যে পহেলা বৈশাখে যে মেলা বসে তা বাঙালি জীবনের একটি জাতীয় লোকজ উৎসব এ বৈশাখী মেলা। পহেলা বৈশাখে ছেলে, বুড়ো, নারী-পুরুষ সর্বস্তরের মানুষ নববর্ষের আনন্দ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রভাত ফেরিতে যোগদান করে। শেষে পান্তা-ইলিশ খেয়ে আনন্দ অনুভব করে।
বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ আসে অন্যরকম স্বপ্ন আর অমিত সম্ভাবনার ফুলঝুড়ি নিয়ে। বাঙালির প্রাণের উত্সব পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। বৈশাখের উত্সব হয়ে উঠেছে বাঙালির ঐক্যের উত্সব। পহেলা বৈশাখে যে উত্সবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তার বড় অনুষঙ্গ নতুন পোশাক।
দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের দিন হিসেবে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিও এই উৎসবে অংশ নেয়। সারা বিশ্বের বাঙালি অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি ভুলে এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। সবার কামনা, যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান।
বৈশাখের প্রথম দিনে ঘরে বসে তো আর থাকা যায় না। ভোরের আলো ফুটতেই সাজসজ্জা শুরু হয় তরুণীদের মধ্যে। গরম, অনভ্যস্ততার কারণে শাড়িতে স্বস্তি বোধ করেন না অনেকেই। তারা অনায়াসে পরতে পারেন সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তা-চুড়িদার। পোশাকের নকশা, কাটে ভিন্নতা আনা যেতেই পারে। আর সাজটাও তো হতে হবে মানানসই। লম্বা বেণি, টিপ আর চুড়িতে থাকবে বৈশাখী আমেজ। বর্তমানে লম্বা কুর্তা, কামিজের সঙ্গে এই বৈশাখে চুড়িদার সালোয়ার বেশ চলছে। তরুণীদের পছন্দের তালিকায় বৈশাখের পোশাকের চিরায়ত রং লাল-সাদার পাশাপাশি সবুজ, নীল, কমলা ও ম্যাজেন্টার মতো উজ্জ্বল রং প্রাধান্য পেয়েছে। কামিজের কাট, নকশাতেও খানিকটা পরিবর্তন এসেছে। একটু ঘেরওয়ালা ফ্রক-কাট কামিজ, লম্বা কুর্তা বা কামিজের হেমে ভি-কাট, পাশাপাশি
শহরের পাশাপাশি গ্রামেও সমান জনপ্রিয় পহেলা বৈশাখ। এদিনে বাসন্তী শাড়িতে সাজে মেয়েরা। পুরুষেরাও নানা রঙের ফতুয়া-পাঞ্জাবিতে সজ্জিত হয়ে রমনা বটমূল বা অন্য কোনো পার্কে বেড়াতে যায়। বাদ পড়ে না শিশুরাও। বাঁশি, একতারা, ডুগডুগি, বেলুন, মুখোশ আর নানা খেলনা তাদের মাতিয়ে রাখে। পান্তা-ইলিশ, নাগরদোলা এ দিনের বিশেষ আকর্ষণ।
সবকিছু মিলিত হয়ে বাংলা নববর্ষে দেশটা হয়ে ওঠে উৎসব মুখর। তাই কবিকণ্ঠে ধ্বনি হয়ে ওঠেছে,_
“এসো, এসো, এসোহে বৈশাখ নববর্ষ
বছরের সব অবর্জনার দূর হয়ে যাক,
যাক পুরাতন স্মৃতি যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক এ নববর্ষ।”