জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ : আমারা খুব গরীব। বড় জায়গায় যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমাগের। তাই বারবার একেনে আসি। ভালো ডাক্তার-সুবিধে হলি গরীবের বিরাট উপকার হতো ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালে সন্তানকে দেখাতে নিয়ে আসা মনোয়ারা বেগম জানালেন তার আক্ষেপের কথা। আরেক রাফিয়া বেগম জানান, ”এত্তোদিন হয়ে গেল বিল্ডিং গুলো সব ভাংগি-ভাংগি পড়ি যাচ্ছে। কেউ কোন ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নিল না? আর ৩/৪ বছর পর একেনে সব শেষ হয়ে যাবেনে, তখন আমাগো কি হবেনে। আবাসিক ভবন গুলোর অনেক কিছুই যেমন জানালা-দরজা-গ্রীল পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। দেয়ালে ধরেছে ফাটল । এক্কেবারে ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।” ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ শিশু হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। যা আজ থেকে ১১ বছর আগের কথা। ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশে তিন একর জমির ওপর এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়।নির্মাণের পর আসবাবপত্র ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়। এসব পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতাল ভবন, ডাক্তার কর্মচারীদের বাসাসহ পুরা কমপ্লেক্স এলাকা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো কিছুই কাজে লাগছে না। সব কিছুই বছরের পর বছর পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আরো জানা গেছে, দুইজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারকে ডেপুটেশনে দিয়ে নামকাওয়াস্তে আউটডোর চালু করা হলেও কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। তাদের কেউই শিশু বিশেষজ্ঞ নন। দিনে দুই পাঁচজন শিশুকে মায়েরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাদের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একজন ডাক্তারকে দেখ-ভাল করার দায়িত্ব দেওয়া আছে। তিনি শিশু হাসপাতালে যান।
হাসপাতালের কিছু আসবাবপত্র পার্শ্ববর্তী মেডিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দামি এক্সরে মেশিন সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস জানায়, খুলনা বিভাগের একমাত্র খুলনাতেই শিশু হাসপাতাল আছে। যেহেতু ঝিনাইদহ জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা ও যশোর জেলার মাঝের জেলা হিসাবে পরিচিত সে হিসাবে পার্শ্ববর্তী জেলার শিশুরাও যাতে খুব সহজে শিশু চিকিৎসা সুবিধা পায় সে কথা মাথায় নিয়েই ঝিনাইদহ জেলাতে এটি স্থাপন করা হয়। তারা আরো জানায়, ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল। এ অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসার জন্য সরকার একটি প্রকল্পের আওতায় ২৫ বেডের এ শিশু হাসপাতালটি নির্মাণ করে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে বেড আছে মাত্র আটটি। তদস্থলে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন শিশু রোগী ভর্তি থাকে। সামাল দিতে হিমশিম খান ডাক্তার নার্সরা। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাক্তার রাশেদা সুলতানা বলেন, হাসপাতালটি চালু করার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ হাসপাতালে এখনও পর্যন্ত কোন নিয়োগ হয়নি। এজন্য হাসপাতাল চালু করা যাচ্ছে না। ২০১৪ সালে এ হাসপাতাল চালানোর জন্য ৪ জন ডাক্তার, ১৮ জন নার্স ও ৬ জন স্টাফের পদ সৃষ্টি করা হয়। সরকারের উপরি মহল চালু না করলে আমাদের করার কিছু নেই ।