ঢাকা অফিস : রিফাত হত্যার এক মাসের বেশি সময় পার হলেও, গ্রেপ্তার হয়নি চার আসামি। মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর, তাকে নিয়ে পুলিশের অতি উৎসাহ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সচেতন মহল মনে করে, মিন্নিকে ফাঁসাতেই তড়িঘড়ি করে মামলার চার্জশিট দেয়ার প্রস্ততি চলছে।
স্বামী রিফাতকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টার ভিডিও দেখে শুরুতে মিন্নির প্রতি সবার ধারণা ছিল ইতিবাচক। তবে, জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী হত্যায় জড়িতের কথা স্বীকারের পর ঘটনা মোড় নেয় উল্টোদিকে।
জিজ্ঞাসাবাদের পর গণমাধ্যমকে পুলিশ জানায়- মাদক বা অন্য কিছু নয়, ব্যক্তিগত কারণেই হত্যা করা হয় রিফাতকে। বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, ‘হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে মাদকের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, ব্যক্তিগত জিঘাংসা থেকে এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।’
এরপর থেকেই মিন্নিকে নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে, মামলার অন্যতম চার আসামিকে গ্রেপ্তার না করেই, তড়িঘড়ি চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতিকে ভিন্ন চোখে দেখছে সচেতন মহল। বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল বলেন, ‘পরিস্থিতি যদি এরকম হয় যে তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অথবা কাউকে ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে তাকে ফাঁসানো হয়েছে তাহলে তো প্রশ্ন থেকেই যায়।’
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘এ মামলার তদন্ত এখন যেভাবে করা হচ্ছে, আমাদের মনে হচ্ছে কোন একজনকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।’ আর, বরগুনা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মিরাজ জানান, ‘মূল মাদক সম্রাটদের আড়াল করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এভাবে মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে। আর, একজন নারীকে নিয়ে যেভাবে টানাহেচড়া করা হচ্ছে আমি মনে করি এটা জঘন্য।’
হত্যাকাণ্ডে মিন্নিই একমাত্র দায়ী নয় এর পেছনে আরও অনেকেই আছে মন্তব্য করে, নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানের অনুরোধ জানিয়েছেন বন্দুকযুদ্ধে নিহত প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম।
এদিকে, প্রভাবশালীদের চাপে হত্যার দায় মিন্নির ওপর দেয়া হয়েছে বলে দাবি তার পরিবেরের। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘পুলিশ প্রভাবিত হয়ে শুধু আমার মেয়ের ওপর দায় চাপাচ্ছে। মূল আসামিদের, যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তাদের আড়াল করতে একটি কূচক্রী মহল আমাদের পেছনে লেগেই আছে।
রিফাত হত্যার মূল আসামিদের ধরার পাশাপাশি সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২রা জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনও চার জন গ্রেপ্তার হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২৬শে জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে নেয়ার পর সেখানেই রিফাত মারা যান। এ ঘটনায়, রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।