প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরা দাকোপ প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশঃ ২০২০-০৪-০৮ - ১৫:৩৩

আজগর হোসেন ছাব্বির : দেশের বিভিন্ন শহর অঞ্চল থেকে আগতদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে না পারলে ভেস্তে যেতে পারে দাকোপকে করোনামুক্ত রাখার প্রশাসনের সকল প্রচেষ্টা এমন আশংকা এলাকাবাসীর। আইলা ক্ষতিগ্রস্থ দু’টি ইউনিয়নে শ্রমজীবি মানুষ ঘরে ফেরায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানির সংকট। উপজেলায় সর্বশেষ কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা ১৬০ জন এবং নমুনা পরীক্ষা ১৭।
খুলনার উপকুলিয় উপজেলা দাকোপের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে। বিশেষ করে আইলাসহ নানা দূর্যোগে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ সুতারখালী এবং কামারখোলা ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ মানুষ নদীতে চিংড়ী পোনা আহরন আর বনজ সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। গত কয়েক বছর চিংড়ী পোনা আহরন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার বনজ সম্পদ আহরন কমে এসেছে। ফলে জীবিকার তাগিদে দু’টি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষের বড় অংশটি ঢাকা চট্রগ্রাম নারায়নগঞ্জ মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গার্মেন্টস ইটেরভাটা রাজমিস্ত্রিসহ দিন মজুরের নানা পেশায় জড়িত ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমজীবি এ সব মানুষ এলাকায় ফিরছে। বিশেষ করে ঢাকা নারায়নগঞ্জ এবং মাদারীপুর এলাকায় কর্মরত বড় অংশ জনসংখ্যা এলাকায় ফিরে আসায় স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ ঘরে ফেরাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা। যদিও ফিরে আসাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু সে উদ্যোগ করোনা মোকাবেলায় কতটুকু ফলপ্রসু হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারন ফিরে আসা জনগোষ্টিদের নিজ পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারলে তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
এদিকে উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মিদের উপস্থিতির বিষয়টি জানতে গিয়ে দেখা যায় বুধবার সকালে ৯ জন ডাক্তার উপস্থিত আছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ মোজাম্মেল হক নিজামী বলেন, হাসপাতালে ২০ জন ডাক্তারের মধ্যে করোনা মেকাবেলায় সরকারী সির্দ্ধান্তে ৬ জনকে প্রত্যাহার করে অন্যেত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অবশিষ্টরা পরিস্থিতি বিবেচনায় শিফট ভাগ করে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানান। এ ছাড়া ২১ জন সেবিকা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মিরা দায়িত্বে আছেন। বুধবার পর্যন্ত দাকোপ থেকে ১৭ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন কেবল মাত্র করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ (আক্রান্ত) হলে সেই তথ্যটি আমাদের জানানো হবে। উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে অভ্যান্তরীন ১৫১ এবং বিদেশ ফেরত ৯ জন। দু’টি ইউনিয়নে খাদ্য পানির মারাত্বক সংকটের বিষয়ে কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল বলেন, আইলাসহ নানা দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ মানুষের ভিন্ন আয়ের উৎস্য না থাকায় তারা বিভিন্ন শহরে শ্রমজীবি হিসাবে কাজ করে থাকে। বর্তমানে তারা বাড়ীতে ফিরে বেকার ঘরে বসে আছে। একই সাথে এলাকায় সুপেয় পানির তেমন কোন উৎস্য নেই। আবার গরমে পানির চাহিদাও বেড়ে গেছে। এই মূহুর্তে খাদ্যের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানায়, উপজেলার সর্ববৃহৎ এ ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ কর্মক্ষম মানুষ এখন বিভিন্ন শহরে কাজ করে। সরকারের দেওয়া এই সামান্য পরিমান খাদ্য সহায়তা কাকে দেব আর কাকে দেবনা সেটা নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তিনি খাদ্য সহায়তা বাড়াতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।