রবিউল ইসলাম মিটু, যশোর: শুক্রবার সকালে যশোরে পাওয়া যুবতীর গলাকাটা মৃতদেহটি পার্বতী ওরফে নুসরাত জাহানের (২৪)। সে যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের পাশে নিরব ওরফে রাব্বীর স্ত্রী এবং মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের অধীর দাসের মেয়ে। নিরবকে বিয়ে করার জন্য সে হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে নুশরাত জাহান নাম ধারণ করেন। পার্বতী ওরফে নুশরাত জাহানকে হত্যা করার ঘটনায় তার মা যমুনা দাস স্বামী নিরবসহ তিন জনের বিরুদ্ধে এজাহার দাখিল করেছেন। এজাহারে অন্যান্য অভিযুক্তরা হলো, মাহিদিয়া পশ্চিমপাড়ার লিয়াকত হোসেনের ছেলে বিপুল হোসেন (২৫) এবং শংকরপুর জিহড়াপাড়ার মিলন হিজড়াকে (২৭) । তাদের সঙ্গে অজ্ঞাত ২-৩ জন ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। পার্বতী ওরফে নুশরাত জাহানের মা যমুনা দাস শহরের কুইন্স হাসপাতালে চাকুরী করেন।
যমুনার অভিযোগ, সাত বছর আগে মাগুরার শালিখা উপজেলার বৈখালী গ্রামের দ্বীন রায়ের ছেলে মহিতোষ রায়ের সঙ্গে পার্বতী রায়ের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে অভি (৬) নামে একটি ছেলে আছে। অভি তার ঠাকুরমার কাছে থাকে। পার্বতীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বনিবনা না হওয়ায় তিনি মায়ের কাছে থাকতেন। অভির জন্মের ১৬ মাস পর পার্বতীর স্বামী মহিতোষ ভারতে চলে যান। তিনি এখনো ভারতেই বসবাস করেন। স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই।
‘স্বামী ভারতে যাওয়ায় পার্বতী একটি গার্মেন্টেস এ কাজ নেয়। সেখানে শিমুল নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। শিমুলের মাধ্যমে নীরব ওরফে রাব্বির সঙ্গে পরিচয় হয় বছর দুয়েক আগে। তারা মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলতো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাস তিনেক আগে পার্বতী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এরং নুসরাত জাহান নাম ধারণ করে নিরবকে বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা মাহিদিয়া বাড়িতে না থেকে ঝুমঝুমপুর চান্দের মোড় এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতো। রাব্বি খুব নির্যাতন করতো নুসরাত জাহানকে (পার্বতী),’ বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
থানায় দেওয়া অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে পার্বতী ও তার মা যমুনা আর এন রোডের সুধীর বাবুর কাঠগোলার কাছের পুজামন্ডপে যান কালীপূজার দিপাবলী দেখতে। সেখানে রাব্বিও যান। এর কিছুণ পর একটি কালো রঙের মোটরসাইকেলে করে ওই মন্ডপেআসেন বিপুল ও মিলন হিজড়া। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুণ কথা বলেন। এরপর মোটরসাইকেলে করে পার্বতীকে নিয়ে শহরের অন্যান্য কালীপুজার দিপাবলী দেখতে নিয়ে যান। রাতে তিনি পার্বতীর মোবাইল ফোনে কল করে বন্ধ পান। মেয়ে ফিরছেন না দেখে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার ঝুমঝুমপুর চান্দের মোড়ের ভাড়াবাসায় যান যমুনা। কিন্তু ঘর বন্ধ পান। আশেপাশের লোকজনও কিছু বলতে পারেননি। শুক্রবার সকালে পার্বতীর বাবা অধির দাস রাব্বির মাহিদিয়ার বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে তাদেরকে না পেয়ে তার চাচার সাথে কথা বলেন। এসময় তার চাচা বলেন, ‘দুই-তিনদিন পর তাদের ভালোমন্দ সব জানতে পারবেন। থানা পুলিশ করার দরকার নেই। এ কথা শুনে পার্বতীর বাবা সেখান থেকে পুলেরহাট বাজারে আসেন। ওই বাজারের কাছের একটি চায়ের দোকানে দাঁড়ান। সেখানে লোকমুখে জানতে পারেন পতেঙ্গালী থেকে মালঞ্চি গামী মুছার বান্দাল এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ে এক তরুণীর গলাকাটা লাশ পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। তিনি বিষয়টি মোবাইল ফোনে পার্বতীর মাকে জানালে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে পাই। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারলো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন এবং গলা কাটা ছিল।’’
যমুনার ধারণা, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে মালঞ্চি এলাকায় নিয়ে গিয়ে তার মেয়েকে হত্যা করেছে।
কোতয়ালী থানার এসআই মোখলেছুজ্জামান জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্ত করার মিনিট দশেক আগে যমুনা রায় হাসপাতালে যান এবং তার মেয়েকে শনাক্ত করেন। পরে ঘটনা অনুসন্ধান করে খুনের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তা জানানো সম্ভব না।
তিনি আরো বলেছেন, নিহতের মা শুক্রবার রাতে কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।