মানস বিশ্বাসঃ করোনা মোকাবেলায় একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার একদল তরুন শিক্ষার্থী। বর্তমান পরিস্থিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশ যখন লকডাউনে, ঠিক এমনি সময়ে করোনা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে যেসব চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের এ মহৎ উদ্যোগ।
প্রথম এ উদ্যোগ নেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র সুমিত চন্দ ও বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী অর্নব খান। অনলাইনে সাঈদ রেজাউনুল হক নাবিল স্যারের ব্লগ এবং WHO এর রিকমেন্ডেশন অনুযায়ি তারা শুরু করেন এই ফেসশিল্ড বানানোর কাজ। স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে বাড়িতে বসেই তৈরি করে ফেলেন প্রথম ১০০ পিস ফেস-শিল্ড। পরবর্তীতে এগিয়ে আসেন গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী শুভ রায়। এছাড়া তাদের সঙ্গে যোগ দেন রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত, রুয়েটের শিক্ষার্থী ইরফান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শান্তনু, ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত এবং শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাইয়ান সহ অনেকে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মধ্যে সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে ঘরে বসে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা তৈরী করে চলেছেন এই ফেস-শিল্ড।
তাদের প্রথম তৈরি ১০০ ফেস-সিল্ড গুলি তারা মোংলা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স (৪৫), সূর্যের হাসি ক্লিনিক(৪০), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস-মোংলা (৫), মেয়র , মোংলা পোর্ট পৌরসভা (২), অফিসার ইনচার্জ-মোংলা থানা (৩), পৌছে দেন। ইতিমধ্যে তারা তৈরী করেছেন ১৬ শ’ এর অধিক ফেস-শিল্ড। ইতিমধ্যে সেসব ফেস-সিল্ড গুলি পর্যায়ক্রমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (২৭৫), বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (৩০০) , গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (২৭৫), খুলনা শিশু হাসপাতাল (২৫), খুলনা ডায়বেটিক হাসপাতাল (৩০), সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল (২৫), বাগেরহাট সদর হাসপাতাল (৩০), গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (২৫), রুপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (৩০), ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (৩৫), কুয়েট মেডিক্যাল সেন্টার (২০), শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল-খুলনা (৮০), আদ দীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (৪০) , খুলনা, খুলনা সদর হাসপাতাল (৩৩), ফুলতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (২৫), রামপাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (৪০), বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (২৫) এবং চালনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (৫) বন্দর হাসপাতালে (১০) পৌছে দিয়েছেন নিজেদের তৈরী মান-সম্পন্ন ফেস-শিল্ড।
তারা এখানেই থেমে থাকেনি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি দলকে নিয়মিত করোনা সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
তাদের এ মহৎ উদ্যোগ ইতিমধ্যে চারিদিকে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এসব ফেস-শিল্ড অত্যন্ত মান-সম্পন্ন এবং ব্যবহার উপযোগী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালগুলোতে পিপিই পাঠালেও সেগুলোর সঙ্গে কোন ফেস-শিল্ড পাঠানো হয়নি। তাই শিক্ষার্থীদের এ মানবিক উদ্যোগকে অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।