শরণখোলা (বাগেরহাট) : ইলিশ আহরণে সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা রাত ১২টায় শেষ। তবুও সমুদ্র যাত্রা অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছে বাগেরহাটের শরণখোলার পাঁচ শাধিক ট্রলারের। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় মারাত্মক বরফ সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও নির্ধারিত সময়ে সাগরে যেতে না পারার হতাশায় পড়েছেন জেলে-মহাজনরা।
টানা ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচী পালন শেষে রবিবার সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন জেলেরা। শত শত ট্রলার নিয়ে জেলেরা বরফ কল গুলোতে ভিড় করছেন। কিন্তু চাহিদামতো বরফ পাওয়া যাচ্ছেনা। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে পর্যাপ্ত বরফ উৎপাদন হচ্ছেনা। তাই অধিকাংশ ট্রলার প্রথম দিনে সাগরে যেতে পারবেনা বলে জেলেরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। ফলে, শরণখোলার মৎস্য পল্লীর উৎসবের আমেজ অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে।
জাতীয় মৎস্য সমিতির শরণখোলা উপজেলা শাখার সভাপতি ও এফবি মুন্না ট্রলারের মালিক মো. আবুল হোসেন বলেন, শরণখোলা উপজেলায় ছোটবড় মিলিয়ে পাঁচশ’র বেশি ট্রলার রয়েছে। অবরোধ শেষ হওয়ার আগেই এসব ট্রলার সাগরে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কিন্তু বরফ কলে গিয়ে বরফ পাওয়া যাচ্ছেনা। এ সমস্যার কারণে প্রথম দিনে একশ’র মতো ট্রলার সাগরে যেতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেঘা বরফ কলের মালিক মোস্তফা কামাল তালুকদার বলেন, পূর্নাঙ্গ বরফ জমতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। কিন্তু বিদ্যুৎ সম্যার কারণে ক্যানে ১০ ভাগ বরফ জমেছে। এর ফলে সব ট্রলারে বরফ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। উপজেলায় মোট তিনটি বরফ কল রয়েছে। সেগুলোতেও একই সংকট বলে জানান তিনি।
রবিবার দুপুরে শরণখোলা উপজেলার রাজৈর এলাকায় অবস্থিত মৎস্য পাড়ার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বরফ কলগুলোর ঘাটে ট্রলার এসে ভীড় করছে। যেটুকু বরফ উৎপাদন হচ্ছে তা আগে থেকে সিরিয়াল দেয়া ট্রলারে তোলা হচ্ছে। সিরিয়াল না পেয়ে অনেক ট্রলার রায়েন্দা খালে নোঙর করে অপেক্ষায় রয়েছে।
এসময় কথা হয় এফবি মাজাহান-১ ট্রলারে মাঝি বাচ্চুর মিয়ার সাথে। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। অবরোধের ২২দিন তিনি বাড়িতেই কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, সারাদিন ট্রলার প্রস্তুত করেছি। জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য মালামাল কেনা হয়েছে। কিন্তু বরফ কখন পাবো তা বলতে পারছিনা। বরফ পেলে রাত তিনটার দিকে আমার সাগরের উদ্দেশে যাত্রা করবো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, ২২দিনের অবরোধ রাত ১২টায় শেষ। এর পর যে কোনো সময় বৈধ পাস নিয়ে ট্রলার সাগরে যেতে পারবে। শরণখোলার সকল জেলে-মহাজনসহ সর্বস্তরের মানুষ অবরোধ কর্মসূচী সফল করতে সরকারকে সহযোগীতা করেছে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিংকন বিশ্বাস বলেন, অবরোধ শেষে জেলেরা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় বরফ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে যানা গেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে।