আহমেদ ফরিদ,রাবি প্রতিনিধি : ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে বিভিন্ন কার্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেও অপরাধ ঢাকতে দুইজন ছাত্রলীগ কর্মীকে অস্বীকার করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার নেতৃবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ছাত্রলীগ কর্মী শাওন ও ওয়ারেস কে নিয়ে এই অস্বীকারে ‘নাটক’ শুরু করেছেন তারা।
সোমবার রাতে ‘রাবিতে ভর্তিচ্ছুর কাছ থেকে ছাত্রলীগকর্মীর চাঁদা আদায়ের অভিযোগ’ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
সংবাদে বলা হয়, ‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা হলের মধ্য ব্লকের নিচতলা, গেমস রুম, অডিটেরিয়াম রুম, গেস্টরুমে অবস্থান করছেন। শাওন ও একই বিভাগের ওয়ারেস ভর্তিচ্ছুদের কাছে গিয়ে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে তাদের ‘এক্সকুসিভ সাজেশন’ নিতে ২০ টাকা দাবি করে। এসময় প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তারা টাকা আদায় করে দুইটি প্রশ্নপত্র হাতে ধরিয়ে দেয়।’
কুড়িগ্রাম থেকে আসা এক ভর্তিচ্ছু জানান, ‘রবিবার সন্ধ্যায় দুইজন ভাই এসে নিজেদের ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে আমাদের হাতে দুইটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। তার বিনিময় আমাদের কাছ থেকে ২০ টাকা দিতে বলে। আমরা ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাই টাকা চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছি।’
আরেক ভর্তিচ্ছু বলেন, ‘সন্ধ্যায় দু’জন আমাদের রুমে এসে দুইটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক টাকা চায়। পরে আমরা তাদের নাম জানতে পারি, একজন ওয়ারেস ও আরেকজন শাওন।’
অথচ সংবাদ প্রকাশের একদিন পরে ওই দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে একটি প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক আবুল বাশার আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘রাবিতে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে ছাত্রলীগ কর্মীর চাঁদা আদায়ের অভিযোগ’ শিরোনামে ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন ও ওয়ারেসকে জড়িয়ে উক্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু উক্ত শিক্ষার্থীদ্বয় ছাত্রলীগের কর্মী নন এবং উক্ত ঘটনার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জড়িত ছিলেন না। সুতরাং উক্ত সংবাদ সম্পূর্ণরুপে ভিত্তিহীন। যা একই সাথে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও রাবি শাখা ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। উক্ত ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। সেইসাথে রাবি রিপোর্টাস ইউনিটি ভবিষ্যতে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
তবে শাওন ও ওয়ারেস যে ছাত্রলীগকর্মী সে বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
শামসুজ্জোহা হলের একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী কিছু দিন আগে ‘পলিটিক্যাল ব্লকে’ থাকতো। যখন ওই দুই শিক্ষার্থী চার সিট বিশিষ্ট কক্ষে থাকতো, তখন তারা ছাত্রলীগের নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতো। এখন এক সিট বিশিষ্ট কক্ষে যাওয়ায় সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে না। শুধু বড় বড় কর্মসূচিতে অংশ নেন ছাত্রলীগের ওই কর্মী। এছাড়া ওই দুই ছাত্রলীগকর্মী ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের ছবিও রয়েছে।
জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার ছবি থাকতে পারে। তবে তারা ছাত্রলীগকর্মী না। তারা হয়তো সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল।
তবে রাবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়লে তাদেরকে অস্বীকার করা বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এর আগেও গত ১০ জুলাই দায়িত্ব পালনকালে এক সাংবাদিককে মারধর করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। মারধরের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে রাবি ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে জড়িত দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন তারা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হুসাইন বলেন, বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। আর কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কাজ করে তার দায় তো আমরা নিতে পারি না। তবুও অভিযোগটি পেলাম। এখন বিষয়টি ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে প্রতিবাদলিপি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে না পাঠিয়ে এবং সংগঠনের নাম জড়িয়ে প্রতিবাদলিপি দেয়াকে দুঃখজনক বলছেন রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি কায়কোবাদ খান।
তিনি বলেন, সাংবাদিক সংগঠন কোনো সাংবাদিককে নিয়ন্ত্রণ করে না। কোনো সংবাদকর্মী কিভাবে সংবাদ পরিবেশন করবে সেটা তার ও তার গণমাধ্যমের বিষয়। সংবাদকর্মীর কোনো সংবাদ নিয়ে যদি কোনো আপত্তি থাকে, তবে প্রতিবাদলিপি সেই গণমাধ্যমে পাঠাতে হবে। এ ব্যাপারে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির করণীয় কিছু নাই। রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির নাম জড়িয়ে এভাবে প্রতিবাদলিপি দেয়াকে ওনভিপ্রেত বলে মনে করে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটি।