আহমেদ ফরিদ, রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় ‘সাম্প্রদায়িক’ প্রশ্নের অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের ‘আই’ ইউনিটের পরীক্ষায় দুইটি প্রশ্নের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। অনেকে আবার প্রশ্নকারীর বিচার দাবি করেছেন।
‘আই’ ইউনিটের দুই নম্বর সেট কোডের প্রশ্নপত্রে দেখা গেছে, অভিযোগকৃত ৪১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে- ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়েনমারের সেনাবাহিনী ও বোদ্ধ ধর্মালম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?’ এবং ৭৬ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে- ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি?’।
প্রশ্ন দুইটি নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক অভিযোগ তুলে আব্দুল মজিদ নামের এক রাবি শিক্ষার্থী ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘এখানে শুধু একটি ধর্মের বিশ্বাসকে উর্ধে তুলে ধরে অন্য ধর্মের বিশ্বাসকে ছোট করার অধিকার এদের কে দিয়েছে? এই রকম বিদ্বেষমুলক সাম্প্রদায়ীক প্রশ্ন করে চারুকলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কি কলুষিত করা হচ্ছে না? এই ধরনের জঘন্য কাজের জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
রাবির সাবেক শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন সুমন তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো যোজন যোজন দূরের বিষয়, দেশের কোনো কওমী মাদ্রাসায়ও এমন প্রশ্ন কখনো হয়েছে বলে শুনিনি! এমন প্রশ্ন যারা করেছে, তাদের মূর্খ বলা হলে মূর্খদের অপমান করা হবে। রাজনৈতিক পেশীশক্তি আর হরেক রকমের কোটার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক নামের বলদ নিয়োগ দিলে তো এমনই হবে!।’
প্রশ্নকারীর বিচারের দাবি জানিয়ে জাকির হোসেন তমাল নামে রাবির সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এমন সাম্প্রদায়িকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশ্ন তৈরির জন্য অবশ্যই প্রশ্নকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেন আগামীতে কেউ এমন প্রশ্ন কেউ করতে না পারেন।’
জুবায়ের আলম নামের এক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এমনিতেই আমার ক্যাম্পাস নিয়ে আমি নিজে খুব লজ্জাবোধ করি মাঝে মাঝে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ড. কুদরত-ই-খুদার কোন ভাস্কর্য নেই, সত্যেন বোসের কোন ভাস্কর্য নেই, যেখানে আইজ্যাক নিউটনের কোন ছবি নেই, যেখানে জীবনান্দ দাশের কোন চিহ্ন নেই। আছে শুধু ছাত্র রাজনীতি বিজ্ঞাপন, নিয়ম ভেঙে মিছিল, ছাত্র রাজনীতির লিফলেট। একটা ভালো বইয়ের দোকান পর্যন্ত নেই। আছে শুধু চোথা বিক্রির ফটোকপির দোকান আর বিসিএস আর চাকরীর বইয়ে ভর্তি ফুটপাথ। এতকিছুর পরে যখন শুনি এই ধরণের প্রশ্ন করা হচ্ছে, আমার লজ্জাটা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।’
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। মানববন্ধনে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডী বলেন, ‘চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাম্প্রদায়িক চিন্তা সংযোজন করেছে। যেটা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের জন্য অপমানজনক।’
মানববন্ধনে বক্তারা প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এসময় প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ফেডারেশনের রাবি শাখা।
প্রশ্নের বিষয়টি জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি। এখানে পরীক্ষার্থীদের যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য সবাইকে ওই দুই প্রশ্নের নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও ডীনদের নিয়ে মূল কমিটি থাকে। তারা প্রশ্ন আহ্বান করেন এবং পরে প্রশ্নগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এ ধরনের প্রশ্ন কিভাবে ঢুকলো এবং কারা জড়িত পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানদের নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি অবশ্যই গুরুতর। আমার মনে হয় প্রশ্নকর্তারা এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে দেন নাই। অসতর্কতার জন্যই এমনটি ঘটেছে। তাদের সঙ্গে বসে সতর্ক করে দেওয়া হবে, যাতে পরবর্তীতে এমন ঘটনা না ঘটে।
আহমেদ ফরিদ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
০১৭৫৮০৩২০৫৩