রিটন দে লিটন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী ও জামাত শিবিরের সস্ক্রিয় দাতা সদস্য খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মাঠে পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকদারদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে এবং প্রকল্পের বিল তুলতে গিয়ে বিভিন্ন কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপ সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান চট্টগ্রাম জেলা এলজিইডি অফিসে কর্মরত থাকার সুবাদে বিভিন্ন উপজেলার প্রকৌশলীরা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেয়ার পরও উপ সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান তাদের রিপোর্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের নামে টাকা আদায় ও ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করার সময় টাকা আদায়সহ বিভিন্ন কৌশলে টাকায় আদায় করা হচ্ছে খলিলের কাজ। এছাড়া জেলা এলজিইডি অফিসে খলিলুর রহমানের উপরে আরো দুইজন অফিসার থাকলেও তারাও খলিলুর রহমানের ক্ষমতার দাপটে তারা অসহায় হয়ে পড়ছে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানায়।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায় খলিলুর রহমান জামাতশিবিরের সক্রিয় সদস্য বর্তমানে তিনি নিয়মিত জামাত-শিবিরের দাতা সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় জামাত নেতাদের সাথে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তিনি বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসের উপহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান প্রায় ২০ বছর ধরে উক্ত পদে রয়েছে। এলজিইডি ভবন থেকে ২০০৭ সালের দিকে পটিয়া উপজেলা এলজিইডি অফিসে বদলী হলেও কয়েক মাসের মাথায় বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ফের চট্টগ্রাম এলজিইডি অফিসে চলে আসে। এরপর থেকে অনিয়ম দুর্নীতিতে প্রতিযোগিতা দিয়ে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে বদলী না হওয়ায় সিন্ডিকেট করে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন খলিল। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায় এবং রাজধানী ঢাকায় ও চট্টগ্রাম নগরীতে একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে নিজের স্ত্রী ও আত্বীয় স্বজনের নামে। এছাড়াও নিজের নামে স্ত্রীর নামে, ভাই বোনসহ আত্বীয় স্বজনের ব্যাংকে নগদ প্রায় কয়েক শত কোটি টাকার খলিলুরের অবৈধ সম্পদের তথ্যও পাওয়া গেছে। খলিলুরের অবৈধ সম্পদের তথ্য অনুসন্ধান করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক ও এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একাধিক ব্যক্তি।
এছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলীর এলজিইডি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনের নামে ঠিকাদারদের ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা, দুইজন সহকারীর নামে দুই হাজার করে ৪ হাজার, গাড়ি ভাড়া বাবদ ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প পরিদর্শনের নামে কম পক্ষে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে বিভিন্ন উপজেলার ঠিকাদারদের অভিযোগ। এছাড়া কাজ শতভাগ ঠিক থাকার পরও প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে যাওয়ার আগে বিল বাবদ প্রতিটি প্রকল্পের জন্য ৫% করে ঘুষ দিতে হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির এক সভায় কার্যালয়ে সংগঠনের সহ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়, ঠিকাদারদের হয়রানি, বিল আটকে রেখে ঘুষ বাণিজ্য, পরিদর্শন বাণিজ্যসহ এলজিইডির অফিসের মাঠ পর্যায়ের দুনীর্তি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন এসময় বক্তব্য রাখেন জেলা ঠিকাদার সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামন, ঠিকাদার মহিউদ্দিন, সাইফুল, মোরশেদুল আলম, আলী হোসেন, নজরুল ইসলাম, শওকত হোসেন, ইলিয়াছ চৌধুরী সারজু, মোহাম্মদ নাছের,মো. ইয়াকুব, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, লিয়াকত হোসেন, মো. শাহজাহান, মোহাম্মদ জামশেদ,মোহাম্মদ নাসির, জাহাঙ্গীর আলম, মোজাহেরুল ইসলাম, জালাল হোসেন শ্যামল, মো. রফিকুল আলম প্রমুখ। ফটিকছড়ির সমিতির হাটের ঘটনায় সন্তোজনক সমাধান না হলে বৃহত্তর চট্টগ্রামে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বর্জনের হুশিয়ারী দেন। এ বিষয়ে চন্দনাইশ উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী রেজাউন নবী গণমাধ্যমকে জানান, জেলা অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমানের মত এবং তার চেয়ে অনেক সিনিয়র প্রকৌশলী আমার অধিনে রয়েছে। উনার কর্মকান্ড দেখলে মনে হয় আমরা তার অধিনে চাকুরী করি, ঠিকাদার এবং বিভিন্ন উপজেলার এলজিইডি অফিসের লোকজনে ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জামাত সম্পৃক্ততা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এর বিষয়ে জানার জন্য এলজিইডি ভবনের উপ সহকারী খলিলুর রহমানের অফিসে কয়েক সাপ্তাহ গেলেও একদিনও তাকে পাওয়া যায়নি, তিনি রাতে অফিস করেন বলে জানান। সর্বশেষ মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করো তার কোনো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আমার অফিসের কারো বিরুদ্ধে সুনিদিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে আমি সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে কিছুকিছু ঠিকাদার কাজে অনিয়ম করে যখন ছাড় পায় না তখন অভিযোগ করেন, এই ধরণের অভিযোগও আমাদের হাতে প্রায় সময় আসেন বলে তিনি জানান।