রিটন দে লিটন, চট্টগ্রাম: “বাংলাদেশ রেল ভবন চলছে মিয়া জাহানের ইশারায়” আর মিয়া জাহান চলছেন তারেক জিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান ঠিকাদারদের ইশারায়” অবৈধ উপায়ে লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা” রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
“প্রবাদ আছে ‘আলাদিনের চেড়াগে ঘষা দিলে যা চায় তা পায়” এ প্রবাদটি বাস্তবে রূপ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হওয়া কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেলায়।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হওয়া মানেই কর্মকর্তাদের হাতে আলাদিনের চেড়াগ পাওয়ার মতো। শীর্ষ পদ মানে সোনার খনি আর শীর্ষ পদের অনুসারী মানে টাকার সিন্দুক।
অনুসন্ধানে জানা যায় বাংলাদেশ রেলভবনের স্বর্ণে খনিতে কর্মকর্তা হিসাবে রয়েছেন মিয়া জাহান ও তার সহযোগী এসিসিএম (পশ্চিম) আব্দুল জব্বার , সিআই মোমিনুল ইসলাম মামুন, সিএমজি ও (বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাণিজ্যিক পূর্ব ) মামুন মিয়াসহ রেলের ৪ কর্মকর্তার।
রেল সূত্রে জানা যায়, অপারেশন ও বাণিজ্যিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ মিয়া জাহান প্রাক্তন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের সময়ে (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অপারেশন) পদে পদোন্নতি পান। পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকেই মিয়া জাহানের অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সর্বোপরি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত অসদাচরণের কারণে মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তাকে এই পদ হতে অপসারণ করা হয়েছিল।
বর্তমানে হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের প্রধান ঠিকাদারদের সহযোগিতায় রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরপরই মিয়া জাহান পুনরায় (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, অপারেশন) পদে পদোন্নতি পান।
বিষয়টি নিয়ে রেল দপ্তরে চাপা ক্ষোভ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও ভয়ে মুখ খুলছেননা কেও।
রেলভবণ ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান, দ্বিতীয়বারের মতো মিয়া জাহান এডিজি (অপারেশন) দায়িত্ব নেওয়ার পর সর্বক্ষেত্রে ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলছেন। তিনি জোনাল অপারেশন ও বাণিজ্য বিভাগের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের জিএম বা সিওপিএসদের পাত্তা না দিয়ে তারেক জিয়ার অনুসারী ও হাওয়া ভবনের প্রধান ঠিকাদারদের ইশারায় নানামুখী অপসিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বেকায়দায় ফেলেছেন রেলকে ।
এ বিষয়ে রেলের অপারেশন/কমার্শিয়াল বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, মিয়া জাহান কর্মজীবনে কখনোই দক্ষতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে কাজ করতে পারেননি। তিনি ( ডিসিও, ঢাকা ) থাকা অবস্থায় কমলাপুর ও সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের পেনশনের নগদ কয়েক কোটি টাকা লোপাট করার কারণে তখন তদন্ত কমিটি মিয়া জাহানকে তিরস্কারও করেছিল।
আরো জানা যায় গুদাম,আবাসিক হোটেল, দোকান ও রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ইজারা দিলেও ইজারাদারদের নিকট হতে রাজস্ব আদায় না করায় রেল বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
ক্যাটারিং সার্ভিসের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় রেলের ৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মিয়া জাহান, এসিসিএম (পশ্চিম) আব্দুল জব্বার, সিআই মোমিনুল ইসলাম মামুন ও সিএমজি ও ( বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাণিজ্যিক পূর্ব ) মামুন মিয়াসহ রেলের এই ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে সঠিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত বছরের ৫ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রেলের একজন নিয়মিত যাত্রী নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পার্বতীপুর গ্রামের জসিম উদ্দিন। আরো জানা যায় উক্ত অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন রেলপথ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, রেলপথ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ কয়েকটি দপ্তরে। উক্ত অভিযোগের
অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন জড়িত থাকার কথা ও বলা হয়েছে।
জসিম উদ্দিনের অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, মিয়া জাহান রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রেলের নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করে বনলতা এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসকে ব্যবহার করে এসিসিএম (পশ্চিম) আব্দুল জব্বার ও সিআই মোমিনুল ইসলাম মামুন, সিএমজি ও (বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাণিজ্যিক পূর্ব ) মামুন মিয়াসহ কয়েকজনকে নিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্যাটারিং পরিচালনা করে বিভিন্ন স্টেশন থেকে নিম্নমানের খাবার বিক্রি করে রেলওয়ের সুনাম নষ্ট করার পাশাপাশি হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
অভিযোগে সূত্রে আরো জানা যায় এই ৪টি ট্রেনে প্রতিমাসে ৫৭ লাখ ১২ হাজার টাকা ক্যাটারিং বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে বছরে ৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মিয়া জাহান, এসিসিএম (পশ্চিম) আব্দুল জব্বার, সিআই মোমিনুল ইসলাম মামুন ও সিএমজি ও (বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাণিজ্যিক পূর্ব ) মামুন মিয়া রেলের ৪ কর্মকর্তা কর্মচারী লোপাট করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেল দপ্তরের এক কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, এডিজি (অপারেশন) মিয়া জাহান অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে থাকেন। তাকে টাকা না দিলে তিনি কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন না। তাই সহজে কারও পদোন্নতিও হয় না। পদোন্নতি কোনোদিন হবে কিনা সেটাও বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশ) মিয়া জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি, আমাকে একজন বলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রেলের ক্যাটারিং সার্ভিসে ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়েছি মিয়া জাহানসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সচিব আরও বলেন, আমি অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।
জানা যায়, মিয়া জাহানদের অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন তারেক জিয়ার অন্যতম সহযোগী ও হাওয়া ভবন সদস্য বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক বড়বাবু খ্যাত মোখলেছুর রহমান। অতীতে রেলে বোমা হামলা অগ্নিসংযোগ এর পেছনে এই তারেক জিয়া অনুসারী হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের সদস্যসহ ঠিকাদারদের ইন্দন থাকার অভিযোগ উঠেছে যাহা গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
রেল সংশ্লিষ্টরা জানান রেল মানে লাভজনক প্রতিষ্ঠান আর এই লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে তারেক জিয়ার অনুসারী ও হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের প্রধান ঠিকাদাররা যার ফলে ভবিষ্যতে আরো বেকায়দায় পড়তে পারে রেল।