নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে দায়িত্বরত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে একই জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ জানুয়ারি পুলিশের এই এসপি সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। ‘এসপির বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ বিচারকের’ শিরোনামে আজ একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে এলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই আদেশ দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তাঁর (এসপি) বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করা হবে না এবং আদালত অবমাননার জন্য কেন তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে না—এ মর্মে কারণ দর্শাতে রুল দিয়েছেন আদালত। তিন দিনের মধ্যে এসপি এস এম তানভীর আরাফাতকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত আছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. তাহিরুল ইসলাম। তিনি জানান, একটি দৈনিক পত্রিকায় আসা প্রতিবেদন নজরে এলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল ও আদেশ দিয়েছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে এসপি এস এম তানভীর আরাফাত দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাই এসপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন ওই বিচারক। আবেদনের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় ছাড়াও আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির দপ্তর বরাবর পাঠানো হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। ১৬ জানুয়ারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে (৫ নম্বর ভোটকেন্দ্র) অবস্থানকালে জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর বেঞ্চে পোলিং এজেন্টের সঙ্গে বসে থাকতে দেখেন। পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তাঁরা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে নাম-ঠিকানা লেখা একটি কাগজ দেখান। ওই কাগজে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর দেখা যায়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই কুষ্টিয়ার এসপি এস এম তানভীর আরাফাত পুলিশ ফোর্সসহ ওই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। তিনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে উচ্চ স্বরে তলব করেন এবং তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন তাঁর (মহসিন হাসান) সঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কথা বলতে না দিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও চাপাচাপি করেন।
মো. মহসিন হাসান অভিযোগে উল্লেখ করেন, তখন তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে একটি বিষয়ে কথা বলছেন, কথা শেষ হলে তাঁকে নিয়ে যেতে বলেন। এরপরও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে তাঁর (মহসিন হাসান) সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় এসপি তাঁর দিকে অগ্রসর হন এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কে, কী করেন এখানে?’ নিজের পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত স্বরে কিছু কথা বলেন। এসপি ও তাঁর সঙ্গে থাকা ফোর্সের ‘আক্রমণাত্মক চরম অসৌজন্যমূলক’ ও ‘মারমুখী আচরণে’ হকচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এসপি সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাঁর (মহসিন হাসান) সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুনরায় তাঁর উদ্দেশে একাধিকবার বলেন, ‘এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে।’ তাঁরা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি জানাতে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করেন তিনি।
আবেদনে বলা হয়, এসপি ও তাঁর সঙ্গীয় কর্মকর্তা ও ফোর্সের আচরণ ২০১০ সালের স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালার ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন।