চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ী সম্পদের অধীশ্বরী পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলার ১ নং মেরুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতনের বিরুদ্ধে পাহাড়ের সম্পদ পাচার, মাদক পাচার, জঙ্গী সংগঠনের মদত,সরকারি নানা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ থাকলেও নীরব রয়েছে প্রশাসন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে পাহাড়ি বনজ সম্পদ পাচার, তত্তক পাচার, মাদক-বাণিজ্য ও সরকারের নানা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও তার ভয়ে মুখ খোলে না এলাকাবাসী।
একাধিক এলাকাবাসীর নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান স্থানীয় প্রশাসন এর কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি তার ক্যাডার বাহিনী মাধ্যমে গুম খুন অপহরণ করে নিরহ মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়।
একাধিক গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতসহ বয়স্ক ভাতার কার্ড, ভিজিবি কার্ড, কাবিখা প্রকল্প, প্রতিবন্ধী কার্ড, বিধবা কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদপত্র তৈরিতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন।
তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা জোর করে লুটপাট করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অনেক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে মাথা পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতা না দেওয়ার কারণ জানতে গিয়ে তার চেয়ারম্যানের মারধরের কারণে প্রতিবন্ধী ও তার ভাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এক পরিবার।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় চেয়ারম্যান রতন অবৈধ কারবার ও অর্থ লুটপাট করে তৈরি করেছেন একাধিক জন্য বিলাসবহুল বাড়ি। প্রতিটি বাড়ি তিন থেকে পাঁচ তলা বিশিষ্ট।
চেয়ারম্যানের কোটি কোটি টাকার আয়ের উৎস কি তাহা তদন্ত করলে সহজেই বেরিয়ে আসবে তার নানা অপকর্মের বিষয়টি।
তার বিলাসবহুল বাড়ির সামনের গেটের দাম আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা, ভেতরের গেট বা দরজার দাম ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা প্রতিটি।
সাধারণত কোনো সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রীর বাড়ির ফটকে এমন গেট লক্ষ্য করা যায় না। অথচ একজন সাধারন চেয়ারম্যান হয়ে কোটি কোটি টাকার বাড়ি এবং এমন বিলাসবহুল গেট কিভাবে তার বসত বাড়িতে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার এই টাকার উৎস কোথায়? দুদক এ বিষয়ে বিষয়ে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে আলাউদ্দিনের চেরাগ পাওয়ার রহস্য।
মাদক বিক্রয় ও বনজ সম্পদ পাচার সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে কোটি কোটি টাকা অর্থ লুটপাট সরকারের রাজস্ব নয় ছয় করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া চেয়ারম্যান এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে রয়েছে কেরানি ইয়াবা বিল্লাল।
এই ইয়াবা বিল্লাল কক্সবাজার থেকে ইয়াবা সহ গ্রেপ্তার হলেও বর্তমানে চেয়ারম্যান রতনের সহযোগী করার জন্য রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদে।
চেয়ারম্যানের সহযোগীকারি বিল্লাল গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট। বিল্লালের ইয়াবা নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে। মাদকের আন্ডারওয়ার্ল্ডে ডন হিসেবে পরিচিত তারা। কেউ কেউ বলেন খাগড়াছড়ির গডফাদার। তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার হচ্ছে মাদক। তাদের সহযোগিতাকারী হিসেবে রয়েছেন সরকারি দলের প্রভাবশালী ওয়ার্ড, থানা জেলা নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত জড়িত রয়েছে। তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রয়েছে সিআইপি খেতাব পাওয়া ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সম্প্রতি দেশের মাদক গডফাদারদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। দেশজুড়ে যার সংখ্যা ১৪১ জন। এতে ক্ষমতাধর অনেক রাজনীতিকের ভয়ংকর কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে আসে। ৩১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়।
আরও জানা যায়, বাল্যবিবাহ সহ বিভিন্ন গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালীদের পক্ষ অবলম্বন করেন তিনি।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের নবায়নকৃত প্রতিটি ঘর থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধান সংগ্রহ অভিযানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান রতন ও দীঘিনালা উপজেলার কৃষি অফিসারের সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, তালিকায় নাম ছিল না প্রকৃত কৃষকদের। কৃষক নয় এমন অনেকের নাম ছিল ধান সংগ্রহের তালিকায়। এরা ছিল চেয়ারম্যানের স্বজন। সোলার বিদ্যুৎ বরাদ্দ নিয়েও দুর্নীতির শেষ নেই রতন চেয়ারম্যানের। দুই নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্ষেপ করে বলেন, ১০ বছর যাবত আমি সভাপতি। আমি সোলার পাইলাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ নম্বর ওয়ার্ডের একজন বলেন, সোলার বরাদ্দ তালিকায় তার নাম, পিতার নাম, আইডি কার্ড নম্বর ছিল। কিন্তু সে সোলার পায়নি। এক নম্বর ওয়ার্ডের কোটিপতি জামান শেখ, ইউসুফ তালুকদার, জমির আলী, রকিবুল ইসলাম অদৃশ্য হস্তক্ষেপে পেয়ে গেছে সোলার। এ সবই হয়েছে চেয়ারম্যান রহমান কবির রতনের অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সওদাগর পাড়া রাস্তার উন্নয়ন ও রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ কাজের ২০১৮-১৯ বরাদ্দ পেয়েছে তবে কোন কাজ হয় নাই। ভিজিডি সুবিধাও দেওয়া হয় নাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমির গৃহহীন মানুষের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে রতন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। একজনের নামে ঘর বরাদ্দের তালিকা তৈরি করলেও অদৃশ্য কারণে তা অন্যজনকে দিয়েছেন।
ইউপি সদস্য শাহ আলম সজীবের মাছের খামারের পাশে নির্মিত হয়েছে সরকারি প্রকল্পের ঘর। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকাবাসী সরকারের উচ্চ মাধ্যমিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানাই গত কয়েক মাস আগে তার ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে তত্তক বিক্রয় করার নামে ঢাকা থেকে তিন ব্যক্তিকে তার এলাকায় এনে জিম্মি করে ৫৯ লক্ষ টাকা আদায় করেন।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে প্রতিবেদককে জানান একটি প্রতিপক্ষ আমার দুর্নাম ছড়ানোর জন্য অপপ্রচার শুরু করেছেন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ গত শুক্রবার ৫ মার্চ বিকালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।