চট্টগ্রাম ব্যুরো: সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বাণিজ্যিক জায়গা প্রতি বর্গফুট মাত্র ১ টাকা ৬৫ পয়সা দরে ভাড়ায় পেয়েছেন এক ব্যবসায়ী। মাত্র ৬ মাস মেয়াদে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক থাকাকালীন খোরশেদ আলম সুজন এই জায়গাটিও বরাদ্দ দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
চসিক প্রশাসকের দায়িত্ব পেয়ে খোরশেদ আলম সুজন কম দামে বাণিজ্যিক জায়গা ভাড়া দেওয়ার একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে।একাধিক অনিয়েমর অভিযোগ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে এনিয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর রেজাউল করিম চৌধুরী চসিকের জায়গা বরাদ্দের অনিয়মের বিষয় খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
খোরশেদ আলম সুজনের অনিয়ম খুঁজতে ইতিমধ্যে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চসিক।
কেউ ফোন রিসিভি করছেন না। আবার ফোন ধরে বলছেন ‘প্লিজ! এ বিষয়ে আপনার সাথে কোন কথা বলতে পারবোনা।’ আবার কেউ কেউ বলছেন ‘এ ব্যাপারে আমাদের কথা বলা নিষেধ আছে।’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সময়ে জায়গা বরাদ্দের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে এভাবেই এড়িয়ে গেছেন চসিকের কর্মকর্তারা।
তবে নগরজুড়ে গুঞ্জন- ফুটপাত বেদখল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বৈধ ইজারা পেতেও পাড়ি দিতে হয় দুর্নীতির মহাসড়ক! যার ধারাবাহিকতায় সমালোচনা শুরু হয়েছে চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সময়ে বরাদ্দ হওয়া জায়গার দাম নিয়ে। প্রশ্ন বাড়ছে বরাদ্দ প্রক্রিয়া নিয়েও। এ ‘অনিয়ম’ খুঁজতে গত ২৩ মে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চসিক।
এরপর কেটে গেছে পুরো এক সপ্তাহ। সবশেষ ৩১ মে (সোমবার) প্রথমবারের মতো একটি বৈঠকও করেছে ওই তদন্ত কমিটি। কিন্তু বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলবেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এর বাইরে কেউ যেন গণমাধ্যমে কথা না বলেন সেজন্য দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা। সিভয়েসকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন চসিকের একাধিক কর্মকর্তা।
তারা বলছেন, ‘বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম কথা বললে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি কমিটির সদস্য সচিব প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামও এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চসিকের কর্মকর্তারা।
সোমবারের এ বৈঠকের পর প্রশাসক সুজনের সময়ে অনিয়মের তদন্তের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা না বলে কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিনের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এখানে বিষয়টি হচ্ছে বিষয়গুলো আমরা দেখছি। এখানে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনা কোথায় আছে এটার প্রশাসনিক একটা বিষয় আছে। আমরা সিস্টেম অনুযায়ী আমরা আগাচ্ছি। পরে যেন প্রশ্ন না আছে।’
সোমবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে একটা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করছি। আমাদের কর্মপরিধি, করণীয় কি, যেগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে সেগুলো কি অবস্থায় আছে।’
তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কত দিন সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। এ ফাইলগুলো দেখার বিষয় আছে। হুট করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না। আর এটা তো কতদিনের বিষয় না। এটা তো দীর্ঘদিনে একটি প্রক্রিয়া। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। দেখি আমরা…..’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটিতে প্যানেল মেয়র-২ ও বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন আইন কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার দাশ ও সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন।
অন্যদিকে প্রশাসক সুজনের মেয়াদকালে চসিকের এস্টেট অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন কামরুল ইসলাম। এখনও চসিকের এস্টেট অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, সুজনের সময়ে যত কম মূল্যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এতো কম মূল্যে জায়াগা বরাদ্দের নজির নেই। নাম সর্বস্ব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এসব জায়গা পছন্দের ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, নগরের অন্তত ১২টি স্পটে জায়গা বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্তরা সাবেক প্রশাসক সুজনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
যদিও সাবেক প্রশাসক সুজনের বলেছেন, চসিকের অনেক জায়গার কোনো হদিস ছিল না, রেকর্ডপত্রেও ছিল না। জায়গাগুলো খুঁজে বের করে সব নিয়মনীতি মেনে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে তার আমলে। আর চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘সব চুক্তিপত্রে লিখা থাকে বরাদ্দ হওয়া জায়গা চাইলে যে কোন সময় ফেরত নিতে পারে সিটি কর্পোরেশন।’