মো: শহীদুল হাসান :
খুলনা মহানগরীর ২৬নং ওয়ার্ডে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে ভবন নির্মাণ করছে গ্রীণবাংলা ডেভেলোপার কোম্পানী। এতে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ১৭ সদস্যের একটি পরিবার। একই সাথে এলাকার একমাত্র খাবার পানির উৎস সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত নলকূপটিও বন্ধ করে দেওয়ায় তীব্র খাবার পানির সংকটে অবরুদ্ধ পরিবারটি চরম অমানবিক অবস্থায় জীবন-যাপন করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন ও অবরুদ্ধ অবস্থার সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্য খালিদ আহমেদ নাসিম জানান, নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের শেরে বাংলা রোডের আমতলা মোড় এলাকায় ৩০৪ নং হোল্ডিংয়ে আমরা পৈতিৃক জমিতে বসবাস করছি। ১৯৫৫ সালে আমার দাদা আব্দুল গফুর মিয়া জনৈক মৌলভী সুলতান মহম্মদের নিকট হতে সাড়ে ১৪ শতক জমি ক্রয় করে বসবাস করে আসছিল। পরবর্তীতে দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা, তার তিন ভাই ও এক বোনসহ উক্ত জমিতে বসবাস করেছে। আপোষ বন্টনের মাধ্যমে আমার বাবা উক্ত ১৪ শতক জমির মধ্য হতে পিছনের দিকের ৩.১৭ শতক জমি পায় এবং উক্ত জমিতে শেরে বাংলা রোড থেকে যাতায়াতের জন্য ১০ ফুট প্রশস্থ রাস্তা রাখা হয়। আমরা দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে উক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি। পরবর্তীতে আমার ছোট চাচা জাফির উদ্দিন আমার অন্য দুই চাচার নিকট হতে তাদের অংশটুকু ক্রয় করে। বর্তমানে আমার ছোট চাচার ওয়ারিশগণ ‘গ্রীণবাংলা’ নামের ডেভেলোপার প্রতিষ্ঠানটিকে দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। তারা আমাদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে বহুতল ভবনটি নির্মাণ করছে। সেই সাথে আমাদের ১৭ সদস্যের পরিবারের পানির একমাত্র উৎস সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত গভীর নলকূপটি বন্ধ করে দেয়। এমনকি খুলনা ওয়াসা থেকে পানির লাইন দিতে আসলে তারা পানির লাইন স্থাপনেও বাধা প্রদান করে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে মারমূখী আচরণ করে আমাদের বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে। যার প্রেক্ষিতে আমরা সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি যার নং ১৩৭৫। সেই সাথে ‘গ্রীণবাংলা’ ডেভেলোপার কোম্পানীটি আমাদেরকে স্বল্প মূল্যে আমাদের জমিটি বিক্রয় করার জন্য চাপ সৃষ্ঠি করে। বর্তমানে আমাদের পরিবারটি অনেক দূর থেকে পানি এনে দৈনন্দিন পানির ব্যবহার করছি। এই রাস্তাটি ছাড়া আমাদের যাতায়াতের আর কোন রাস্তা নেই। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসন, সিটি মেয়র, খুলনা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ভুক্তভোগী পরিবারটির প্রতিবেশী সামছুজ্জামান মিলু জানান, আমরা ছোটবেলা হতে দেখে আসছি এখানে একটি ১০ফুট চওড়া ইটের রাস্তা ছিল। যে রাস্তা দিয়ে নাসিমদের পরিবারের সদস্যরা যাতায়াত করতো। কিন্তু এখন দেখছি ডেভেলোপার কোম্পানীটি ইটের রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেলে পরিবারটি আর যাতায়াতের কোন রাস্তা থাকবে না। সেই সাথে এখানে তাদের পানির জন্য একটি ডীপ টিউবওয়েল ছিল তাও তারা তুলে ফেলেছে। এখন পরিবারটি অমানবিক জীবন যাপন করছে। তারা অনেক দূর থেকে নিত্যদিনের ব্যবহার ও খাবারের পানি আনছে।
অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্য খালিদ আহমেদ নাসিমের ছোট চাচার ছেলে মো. শাকিল আহমেদ রাজা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের জায়গাতে ওদের কোন যাতায়াতের রাস্তা ছিলনা। আমাদের ব্যবহারের জন্য একটি রাস্তা ছিল তবে ওটা ওদের রাস্তা না। আমার মেঝো চাচার পরিবারের সদস্যদের যাতায়াতের জন্য আলাদা রাস্তা রয়েছে। তবে সে রাস্তাটি প্রতিবেশী মালিকের ব্যক্তিগত জায়গা হওয়ায় তারা দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বর্তমানে তাদের চলাচলের কোন রাস্তা নেই। এলাকার কমিশনার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে ওদের ঐ পিছনের রাস্তা ব্যবহার করতে বলেছে। আমাদের জমির আর এস দাগ ও প্লট নম্বর আলাদা তবে এস এ খতিয়ানে এক সাথে ছিল। ওরা ওদের যতটুকু জমি পাওয়ার কথা ততটুকু জমি নিয়ে বসবাস করছে। তাই আমাদের এখানে ওদের কোন অংশ নেই।
অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রীণবাংলা ডেভেলোপার কোম্পানীটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. রাসেল হোসেন বলেন, আমরা কোন রাস্তা বন্ধ করে ভবন নির্মাণের কাজ করছি না। মালিকপক্ষ যখন আমাদের কাছে জায়গা হস্তান্তর করে তখন এখানে কোন রাস্তা ছিল না। আমরা খুলনা উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি নিয়ে সব নিয়মনীতি মেনে ভবন নির্মাণের কাজটি করছি। এখানে আমাদের কোন দায় নেই। আর এখানে কোন নলকূপ ছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমরা যাদের নিকট হতে জমি নিয়েছি তাদের আর অভিযোগকারীদের জমির আর এস খতিয়ান ও দাগ নম্বরও আলাদা। এমনকি তাদের অন্য দিক থেকে রাস্তা রয়েছে যা তারা লুকানোর চেষ্টা করছে।
যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে মুঠোফোনে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মুনতাসির মামুন বলেন, যদি কেউ অভিযোগ করে এবং এর সত্যতা পাই তাহলে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমরা ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আর অবশ্যই রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ভবন নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পানির লাইন স্থাপনে বাধা প্রদানের বিষয়ে খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী দেবতোষ কুমার দাস মুঠোফোনে বলেন, প্রায় ৩মাস আগে আমরা খালিদ আহমেদ নাসিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওয়াসার লাইন স্থাপন করতে গেলে সামনের অংশের জমির মালিকরা আমাদের বাধা প্রদান করে। পরবর্তী আমাদের গ্রাহক খালিদ আহমেদ নাসিম জানায় নিজেদের মধ্যে আপোষ মিমাংসা করে আমাদেরকে তারা জানাবে। তবে এখনও পর্যন্ত তারা আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি।