দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও দখল উচ্ছেদ করে সড়ক
উন্নয়নের দাবী এলাকাবাসীর
ইউনিক প্রতিবেদক : খুলনার দাকোপের লাউডোবে দুই ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগকারী মিশনবাড়ী মোড় থেকে কালিকাবাড়ী ঘাট সড়কের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে টয়লেট নির্মান ও সরকারী প্রজেক্টের আওতায় রাস্তা নির্মান কাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে দখলবাজ চক্র বিষ্ণু বাছাড়, সাগর বাছাড় ও পবিত্র সরকার গং। একই সাথে এলাকার মানুষের সুবিধার্থে রাস্তার উন্নয়নে সহায়তা করায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি এ্যাড. গোরিয়া সরকার ঝর্নার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারসহ অপপ্রচারও করছে ওই চক্রটি। এ ঘটনায় দখলবাজ বিষ্ণু বাছাড়, সাগর বাছাড় ও পবিত্র সরকার গংয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।
এ ঘটনার নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যভস্থা গ্রহনেরও দাবী জানিয়েছেন।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোব ও বানীশান্তা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ মিশনবাড়ী মোড় থেকে কালিকাবাড়ী ঘাট সড়কটি ৩০ বছর ধরে চলাচল করে আসছে। এ সড়কের আশপাশে দুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, একটি সাইক্লোন শেল্টারসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অফিস রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে লাউডোব ইউনিয়নের লাউডোব, মধ্যপাড়া, পশ্চিমপাড়া, খুটাখালী দক্ষিণ পাড়া, লাউডোব দক্ষিণপাড়া, রঞ্জনখালী, কালিকাবাটি, বুড়িরডাবুর হরিনটানা, বাজুয়া, উত্তর বানীশান্তা এবং বানীশান্তা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে।
গত ৩০ বছরেও এই রাস্তাটির সংস্কার না হওয়ায় এলাকার মানুষ হাটুপানি ও কাদায় চলাচল করতে হয়। চরম বিপাকে পড়ে এলাকার স্কুলগামী শিশুরা। এছাড়া কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্যসামগ্রী বাজারজাত করতেও ব্যাপক অসুবিধায় পড়ছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষাকালে এলাকার মানুষের চরম অসুবিধায় পড়তে হয়।
কথা হয় লাউডোর পশ্চিমপাড়ার তুহিন রহমান, লাউডোরে সুশান্ত সরকার, মধ্যপাড়ার সুশান্ত সরকার, অমিত বিশ্বাস, দীলিপ সরকারসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, লাউডোর মিশনপাড়া মোড় থেকে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি পশ্চিমপাড়া, কালিকাবাটি খাট খুটাখালীর রাস্তায় মিশেছে।
এলাকার দুই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষের সহজ যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিন দশকেও রাস্তাটির উন্নয়ন না হওয়ায় মানুষ চরম দূর্ভোগের মধ্যদিয়ে চলাচল করে। বিগত সময়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। এই রাস্তাটি তাদের এলাকার জন্য খুবই প্রয়োজন। রাস্তার সংস্কার ও উন্নয়ন হলে পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রা ও আর্থিক পরিস্থিতি। তাই এলাকাবাসী স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যের কাছে রাস্তাটির সংস্কারের দাবী জানায়।
লাউডোব গ্রামের প্রশান্ত বৈদ্য, শ্যামল সরকার, স্থানীয় মিশনের কাটিকিট সুজন সরকার, নারী সংগঠক সঞ্চিতা বিশ্বাসসহ আরও অনেকে জানান, এলাকার মানুষের আবেদনের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কারে গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাতীয় সংসদের মহিলা সদস্য এমপি এ্যাড. গোরিয়া সরকার ঝর্ণা চেষ্টা করেন। পরে ওই বছরে সরকারের এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় রাস্তাটির উন্নয়নে স্থানীয় লাউডোব ইউনিয়ন পরিষদ পাঁচ লাখ টাকার প্রকল্প নেয়।
কিন্তু গ্রামের দখলবাজ বিষ্ণু বাছাড়, সাগর বাছাড় ও পবিত্র সরকারগং নিজেদের জমি দাবী করে অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে টয়লেটসহ স্থাপনা গড়ে তোলে। সম্প্রতি রাস্তার উন্নয়নে দখলবাজদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হলে দখলদাররা কাজে বাঁধাদান করে। স্থানীয় মহিলা এমপি এ্যাড. গোরিয়া সরকার ঝর্ণার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচারসহ অপপ্রচার শুরু করে। ফলে রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে উন্নয়ণ কাজ চরম অনিশ্চতায় পড়ে। এতে চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। অবৈধ দখলকারী ও রাস্তার উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টিকারীদের শান্তিরও দাবীও জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় ইউপি মেম্বর ও রাস্তার উন্নয়ন কাজের পিআইস’র সভাপতি প্রদীপ সরদার জানান, গত ২০১৮-১৯ সালে রাস্তাটির উন্নয়নে মহিলা এমপি প্রকল্প বরাদ্ধ করিয়েছেন। কয়েকজন দখলদার অবৈধ স্থাপনা নির্মান, বাধা সৃষ্টি এবং মিথ্যা অভিযোগের কারনে কাজ করা যায়নি। সম্প্রতি এলাকাবাসীর উদ্যোগে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন জনপ্রতিনিধিরা রাস্তার অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে রাস্তার কাজ শুরু করে।
গত শনিবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ যুবরাজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং এলাকাবাসী যৌথভাবে রাস্তার কাজে পিআইসিকে সহায়তা করে রাস্তার নির্মানা ঠিক করার পর কাজ শুরু হয়। এখানে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও রাস্তার কাজ শুরুর বিষয়ে স্থানীয় মহিলা এমপি এ্যাড. গোরিয়া সরকার ঝর্ণার কোন দায় নেই। তিনি কারো বৈধ স্থাপনার ক্ষতি না করে এবং সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করার নিদের্শনা দেন। পিআইস সেইভাবে কাজ করছে।
রাস্তায় জোর করে টয়লেট ও স্থাপনা নির্মানকারী বিষ্ণু বাছাড়, সাগর বাছাড় ও পবিত্র সরকার গং জটিলতার সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যেই এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু রঞ্জন বিশ্বাস, থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) আশরাফ হোসেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ যুবরাজসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকাবাসীর চাহিদার প্রেক্ষিতে অবৈধ স্থাপনা অপসারন ও রাস্তার কাজ সুষ্ঠভাবে করার নির্দেশনাও দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিন্টু রঞ্জন বিশ্বাস বলে জানা তিনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ যুবরাজ জানান, তিনি ১০ বছর আগে চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সে সময়ে বরাদ্ধ না থাকায় সম্ভব হয়নি। তিনি আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে এলাকাবাসীর আবেদন এবং মহিলা এমপির নিদের্শনায় দুই বছর আগে প্রকল্প বরাদ্ধ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। গত শনিবার তিনি নিজে থেকে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে রাস্তার কাজের নিশানা ঠিক করেন।