দেশ প্রতিবেদক, নওগাঁ:
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের জাকির হোসেনের (৫০) পাকা একটি বাড়ি। একসাথে তাঁর স্বজনদের আরও তিনটি আধা পাকা পাকা বাড়ি। এসব বাড়ির প্রতিটিতে রয়েছে গরু রাখার গোয়ালঘর। তবে গরুগুলো তাদের নিজেদের না। চুরি করে গরু গুলো এনে গোয়াল ঘরে রাখা হতো। শনিবার চোরা গরু উদ্ধার অভিযানের পর এসব তথ্য জানা গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গরু চুরি করে এনে এসব গোয়ালঘরে বেঁধে রাখা হতো। গরুচোর চক্র গড়ে তুলেছিলেন জাকির হোসেন (৫০), তাঁর ছেলে আবদুস সবুর (২৫), বেয়াই রুহুল আমিন (৪৩) ও নাতজামাই তানজিদ আহাম্মেদ (২০)।
শনিবার নওগাঁর বদলগাছি থানা-পুলিশ ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানা-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনের চারটি বাড়ির গোয়ালঘর থেকে চোরাই ওই ১২টি গরু ও একটি ছাগল উদ্ধার করেছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দুই থানা-পুলিশের এই যৌথ অভিযান চলে। এ সময় জব্দ করা হয়েছে গরু-ছাগল চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে গরুচোর চক্রের ওই সদস্যদের। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ বলছে, জাকির হোসেন একজন কুখ্যাত গরুচোর। এ কাজে জাকির হোসেনের পরিবারের সবাই জড়িত। তাঁরা সবাই মিলে রাতের বেলায় গরু-ছাগল চুরি করে আনার পর সেগুলো বাড়ির গোয়ালঘরে রাখতেন। পরে দূরদূরান্তের হাটবাজারে চোরাই গরু-ছাগলগুলো বিক্রি করতেন। বিক্রি করতে না পারলে চোরাই গরু-ছাগলগুলো জবাই করে মাংস বিক্রি করতেন। এটিই তাঁদের পেশা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস ধরে নওগাঁর বদলগাছি ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাতে সিঁধ কেটে ও বিভিন্ন কৌশলে চোরেরা বাড়িতে ঢুকে গরু-ছাগল চুরি করছিলেন। প্রায় ২৫ দিন আগে রাতে বদলগাছি উপজেলার হলুদবিহার গ্রামের গোলাম মোস্তফার দুটি গরু চুরি হয়। আজ সকালে জাকির হোসেন তাঁর বাড়ির অদূরে ঝাপড়িতলার মোড়ে কয়েকটি গরু বিক্রির জন্য ভটভটিতে তুলছিলেন। এ সময় গোলাম মোস্তফার এক আত্মীয় ভটভটিতে থাকা একটি গরু গোলাম মোস্তফার বলে চিনতে পারেন। তখন তিনি গোলাম মোস্তফাকে খবর দেন। গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থলে এসে গরুটি শনাক্ত করেন। তখন জাকির হোসেন ও তাঁর ছেলে গরুটি তাঁদের কেনা বলে দাবি করেন। মুহূর্তেই সেখানে লোকজন জড়ো হন। পরে স্থানীয় লোকজন ঘটনাটি বদলগাছি থানা-পুলিশকে জানান।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জাকির হোসেনের বাড়িতে যায়। ওই বাড়িতে আরও চারটি গরু পাওয়া যায়। চোরাই গরু পাওয়ার খবর মুহূর্তের মধ্যে বদলগাছি ও আক্কেলপুর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। তখন চুরি যাওয়া গরুর মালিকেরা তেঁতুলিয়া গ্রামে জাকির হোসেনের বাড়িতে ভিড় জমান। এর মধ্যে আক্কেলপুর পৌর শহরের হাস্তাবসন্তপুর মহল্লার মিঠু হোসেনের একটি গরু সেখানে পাওয়া যায়। তখন আক্কেলপুর থানা-পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। এরপর বদলগাছি ও আক্কেলপুর থানা-পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জাকির হোসেনের চারটি বাড়ি থেকে ১২ চোরাই গরু ও একটি ছাগল উদ্ধার করে
এ সময় জাকির হোসেন, তাঁর ছেলে, বেয়াই ও নাতজামাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করে পুলিশ। বেলা দুইটায় চোরাই গরু-ছাগল ও সরঞ্জামাদিসহ তাঁদের বদলগাছি থানায় নেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় গরু চুরি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
স্থানীয় কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপন বলেন, জাকির হোসেন ও পরিবারের সদস্যরা রাজকীয়ভাবে চলাফেরা করতেন। জাকির হোসেন পেশায় একজন গরুচোর। পরিবারে অন্য সদস্যরাও গরু চুরির কাজে যুক্ত ছিলেন। জাকিরের বাড়ি থেকে চোরাই গরু-ছাগল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান ও বদলগাছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, গরুচোর চক্রের সদস্য জাকির হোসেন, তাঁর ছেলে, বেয়াই ও নাতজামাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গরু চুরি ও অস্ত্র আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরও চোরাই গরু উদ্ধারে অভিযান চলছে।