আলিফ আবেদীন গুঞ্জন, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ মামলা নেই, নেই আদালতের সাজা। মাত্র জিডি’র উপর ভর করে প্রায় তিন বছর ঝিনাইদহ জেলখানায় বন্দী রয়েছেন এক প্রতিবন্ধী। তার নাম, বাড়ি ও জন্ম পরিচয় এই তিন বছরেও রয়েছে অজানা। এদিকে গত রোববার (৩১ জুলাই) জেলখানায় বন্দী ওই প্রতিবন্ধী পরিচয় সনাক্ত করতে উদ্যোগ নেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন এসআই মোঃ ইউনুস আলী গাজী ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা ওই প্রতিবন্ধিকে স্থানীয় লোকজনের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে সেফ কাষ্টডির জন্য আদালতে প্রেরণ করেন। ৩১ আগস্ট ২০২০ সালে আদালতের নির্দেশে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হতে আঙুলের ছাপ গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে চিঠি প্রেরণ করা হয়। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ আদালতকে অবগত করে যে, সাধারণ কাগজে সংগৃহীত আঙ্গুলের ছাপ দ্বারা সঠিক পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে ডিজিটাল ডিভাইজের মাধ্যমে ডাবলুউি.এস.কিউ ফরমেটে আঙ্গুলের ছাপ গ্রহন করা হলে তা সঠিক ভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব। প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ ইয়াছিন আলী নাম-ঠিকানা যাচাই সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, অজ্ঞাত ব্যক্তির চেহারা অঙ্গভঙ্গি অনেকটা রোহিঙ্গাদের মত। ঝিনাইদহের জেল সুপার এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করেন যে, অজ্ঞাত ব্যক্তি কারাগারে আসার পর থেকে তার নাম-ঠিকানা বলতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে মামলা নেই। শুধুমাত্র সাধারণ ডায়েরি মূলে তিনি ২ বছর ৮ মাস কারাগারে বন্দী রয়েছেন। ঝিনাইদহ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস আদেশে উল্লেখ করেছেন যে, নাম ঠিকানা-বিহীন অজ্ঞাত পুরুষটি একজন বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী। বিনা বিচারে কাউকে জেল হাজতে আটক রাখা ন্যায় বিচার ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার পরিপন্থি। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অবিলম্বে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে তার নাম-ঠিকানা উদঘাটন করা প্রয়োজন। একারণে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ঝিনাইদহ নির্বাচন অফিসে নিয়ে যথাযথ ফরমেটে আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে ম্যাচিং পূর্বক আদেশ প্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে স্ব স্ব এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উক্ত ব্যক্তির ছবি যাচাই-বাছাই পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এসময় টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার অফিসার ইনচার্জদের সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের জেল সুপার অনোয়ার হোসেন বলেন, আদালতের নির্দশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অজ্ঞাত ব্যক্তি জেলখানায় সুস্থ্য আছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড আজিজুর রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি বিনা অপরাধে কোন ভাবেই জেলখানায় বন্দি থাকতে পারে না। এটা সভ্য সমাজে অমানবিক। তিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা সঠিক। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক বলেন, আদালতের কোন নির্দেশনা এখনো তিনি পাননি। লিখিত নির্দেশনা পেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করবেন। ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক আমিনুর রহমান টুকু বলেন, বিনা বিচারে কাউকে জেল হাজতে আটক রাখা ন্যায় বিচার ও পরিপন্থি। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক কারাগারে আটক ব্যক্তিকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।