খুলনা : বর্ষাকালে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদের জলজট দুর্ভোগ স্থায়ীভাবে সমাধান এবং পণ্যবাহী নৌ-যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ভৈরব নদ খনন জরুরি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সভাÑসমাবেশে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক নদী ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছেন- ভৈরব, রূপসাসহ তিন নদীর ড্রেজিং সম্পন্নের জন্য সমীক্ষা প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বৃষ্টি মৌসুমে ড্রেন থেকে উপচে পড়া পানিতে শহরের বিভিন্ন সড়ক সয়লাব হয়ে পড়ে। নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের অনেকের আবাসস্থলেও পানি প্রবেশ করে। মার্কেট, শপিংমল এবং কাঁচাবাজারও সাময়িক জলামগ্ন পরিস্থিতির মুখে পড়ে। পূর্ণিমার যুগার গোনে জোয়ারের পানি বাড়লে শিপইয়ার্ড সড়ক উপচে রূপসা নদীর জল শহরে প্রবেশ করে। ১১শ’ ৬৫ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ড্রেন দিয়ে গোটা শহরের পানি নিষ্কাশন হয়। এর মধ্যে এক ফুট অথবা আরও কম প্রশস্ত ড্রেনেরও দেখা মিলবে। ড্রেনগুলো দিয়ে ২০ টি খাল, ময়ুর ও হাতিয়া নদী হয়ে ওই পানি ভৈরব এবং রূপসা নদীতে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু, পলি জমে ভৈরবের বিভিন্ন স্থানের তলদেশ উচু হয়ে যাওয়ায় ভাটার সময় শহর জলজট মুক্ত হতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় লাগে। শহরের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা ও কেসিসি’র সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ভৈরব নদে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ সম্পাদন করেছেন। জরিপের ফলাফল অনুযায়ি মহেশ^রপাশা খাদ্য গুদাম সংলগ্ন নৌ এলাকা হতে শিরোমনি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার , ফুলতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন নদী হতে দুই কিলোমিটার এবং ফুলতলা উপজেলা এলাকা হতে শুরু করে যশোরের নোয়াপাড়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নৌ এলাকা নাব্যতা সংকটে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন- কেসিসি’র তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: আব্দুল আজিজ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, বর্ষাকালে জলজট দুর্ভোগ মোচনে কর্তৃপক্ষ ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের অধিকাংশ ড্রেন প্রশস্ত এবং গভীর করে নির্মানের কাজ করছেন। গত ২০১৯ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যদিও মহামারী করোনা দুর্যোগের কারণে ২০২০ সালে উন্নয়ন কাজ থমকে ছিল। ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ হতে আরও এক বছর লাগতে পারে।
তিনি বলেন, এই উন্নয়নযজ্ঞ শেষ হলে গভীর ও প্রশস্ত ড্রেনগুলোতে বৃষ্টির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে। তথাপি রূপসা ও ভৈরব নদের তলদেশ খনন করা না হলে শহরবাসীকে জলজট দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করার টার্গেটের শতভাগ সফলতা মেলার সম্ভাবনা কিছুটা ক্ষীন হতে পারে।
(বিআইডব্লিউটিএ) এর খুলনার উপ-পরিচালক মো: মাসুদ পারভেজ দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, পণ্যবাহী নৌ-যান চলাচলের জন্য ভাটার সময় নদীর পানির গভীরতা ১৭ ফিট থাকা আবশ্যক। কিন্তু নাব্যতা সংকটে পড়া ভৈরবের তিনটি পয়েন্টে ভাটার সময় পানির গভীরতা ৮ থেকে ১৩ ফিটের মধ্যে ওঠা-নামা করে। অগভীর ওই পয়েন্টগুলো অতিক্রমের জন্য বিভিন্ন ধরণের পণ্যবাহী নৌযানগুলো নদীর অন্য স্থানে নোঙর করে চালকেরা জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করেন। তবে, ভৈরব নদের কাস্টমঘাট এলাকা হতে দৌলতপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ওই এলাকায় ভাটার সময় পানির গভীরতা অন্তত ২৫ ফিট থাকে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বা-পাউবো) কর্তৃপক্ষ বলছেন, রূপসা, ভৈরব ও আতাই নদীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। গত মাস খানেক আগে প্রস্তাবনার উপর একটি যাচাই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের (পওর) বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, সমীক্ষা প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা অনুমোদিত হলে সমীক্ষা সুপারিশের আলোকে ওই তিন নদীর ড্রেজিং এবং ভাঙ্গন রোধে ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হবে।